মধু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ‍ও নিয়ম সম্বন্ধে বিস্তারিত জানুন

ডাবের পানির ১০ টি উপকারিতামধুকে সুপার ফুড বলা হয়। মধু আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সবারই জানা উচিত। মধু আমরা কেন খাব, কি উপকার হবে ও মধুর অপকারিতা কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এটা জানতে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

মধু খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিনিয়ত সঠিক সময়ে মধু খাওয়ার অনেক উপকারীতা রয়েছে। কি কি ভাবে ও নিয়মে মধু সেবন করলে আমরা সর্বোচ্চ উপকার পাবো সে বিষয়ে জানতে এই পোষ্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকাঃ

মধু মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং অত্যন্ত উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। স্বাদ এবং পুষ্টি গুণের বিচারে মধুকে প্রথম স্থানে রাখা যায়। মধুকে বলা হয় প্রকৃতির মিষ্টি অমৃত। মধুতে রয়েছে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান। মধুর নানাবিধ উপকারিতার মধ্যে একটি হচ্ছে মধু আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। মধুতে থাকা গ্লুকোজ শরীরে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।
ক্লান্তি প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সাহায্য করে মধু। শ্বাসকষ্ট নিরাময় ও রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে মধুর জড়ি মেলা ভার। মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা না জেনেই আমরা মধু খাই। সঠিক সময়ে এবং সঠিক নিয়মে নিয়মিত মধু সেবন করতে পারলে আমরা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারব এবং অনেক রোগবালা থেকে আমরা আমাদের শরীরকে রক্ষা করতে পারবো।

মধু খাওয়ার উপকারিতাঃ

হজমে সহায়তা করে মধুঃ মধুতে যে শর্করা থাকে তা সহজে হজম হয়। মধুতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্ত প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে। যাদের পেটের সমস্যা আছে তাদের জন্য মধু বিশেষ উপকারী।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। ডায়রিয়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। এক চা চামচ খাঁটি মধু প্রতিদিন ভোর পান করলে এ সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যায়।

রক্তশূন্যতায়ঃ রক্তশূন্যতায় মধু বেশ ফলদায়ক। হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে। মধুতে থাকে প্রচুর পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।

অনিদ্রায় মধুঃ যাদের অনিদ্রার সমস্যা আছে তাদের জন্য মধু একটি ভালো ঔষধ। রাতে সবার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে।

শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে মধুঃ শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে মধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন অ্যাজমা রোগীর নাকের কাছে মধু ধরে শ্বাস নিতে বললে সে স্বাভাবিক ও গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারে। অনেকে মনে করেন শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য পুরনো মধু বেশ ভালো।

যৌন দুর্বলতায়ঃ যেসব পুরুষদের মাঝে যৌন দুর্বলতা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন নিয়ম করে মধু খান তবে তারা বেশ উপকৃত হবেন।

মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধুঃ মন গহবরে স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দাঁতের উপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। দাঁতে পাথর জমাট বাধা রোদ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে।মুখে যদি ঘাড়ের জন্য গর্ত হয় মধু সেই গর্ত ভরাট করতে সাহায্য করে এবং সেখানে পুজ জমতে দেয় না। পানির সাথে মধু মিশিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়।

পাকস্থলীর সুস্থতায় মধুঃ মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের সমস্যা দূরীভূত করে। মধুর ব্যবহারে হাইড্রোক্রলিক এসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমি ভাব এগুলো দূর করা সম্ভব হয়।

পানি শূন্যতায়ঃ ডায়রিয়া রোগীকে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলি লিটার মধু মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এতে তার শরীরের পানি শূন্যতা রোধ করা যাবে।

দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে মধুঃ চোখে দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে মধু বেশ উপকারী। গাজরের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।

রূপচর্চায় ব্যবহৃত মধুঃ মেয়েদের রূপচর্চায় বর্তমানে মধু বেশ জনপ্রিয়। মুখের ত্বকের মসৃণতা ও কোমলতা বৃদ্ধি জন্য মধু ব্যবহৃত হয়।

ওজন কমাতে মধুঃ মধুতে কোন চর্বি ও প্রোটিন নেই। পেট পরিষ্কার করে চর্বি কমায় ফলে দেহের ওজন কমে।

তারুণ্য বজায় রাখতেঃ তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকে ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে মধু। আমাদের শরীরের সামগ্রিক শক্তি ও তারুণ্য বাড়াই মধু।

দাঁত ও হাড় গঠনেঃ মধুর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত,হাড় ও চুলের গোড়া শক্ত করে।

হাঁপানি রোদে মধুঃ যাদের হাঁপানির সমস্যা আছে তারা আধা গ্রাম গুড়ো করা গোলমরিচের সাথে সমপরিমাণ মধু ও আদা মিশিয়ে দিলে তিনবার খেতে পারেন। এটা হাঁপানি রোদে সহায়তা করবে।

রক্ত পরিষ্কারকঃ ২ চা চামচ মধু ১ চামচ লেবুর রস ও এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন পেট খালি করার আগে খেতে হবে। এই মিশ্রণটি রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং রক্তনালী গুলো পরিষ্কার করে।

হৃদরোগঃ ২চামচ মধুর সাথে এক চামচ মৌরি গুরুর সঙ্গে বুড়োর গুড়োর সঙ্গে মিশিয়ে একটি মিশ্রন তৈরি করতে হবে। এটি হৃদ রোগের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করে। এটা মাংসপেশিকে সবল করে ও এর কার্যক্ষমতা বাড়ায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরের ভেতরের ও বাইরের যেকোনো ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষমতা রাখে মধু। মধুতে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান আছে যার ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করে মধু।

অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মধু খাওয়ার উপকারিতাঃ

সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণের কারণে মধুর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। এটি আমাদের জন্য অনেক স্বাস্থ্যকর এবং চিনির বিকল্প হিসেবে এটিকে ব্যবহার করা হয়। সব বয়সী মানুষের জন্যই মধু একটি উত্তম খাবার । এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন খনিজ উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য মধু অনেক উপকারী খাবার।
গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে কিন্তু তারা যদি নিয়ম করে মধু সেবন করে তবে এ মধু তাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে বাড়িয়ে তোলে। মধুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন মিনারেল ও এনজাইম থাকার কারণে এটি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে নানাবিধ রোগ থেকে রক্ষা করে।

মধুতে এন্টি ভাইরাল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি ঠান্ডা বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং সুরক্ষা প্রদান করে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণ সমস্যা। মধুতে থাকা বি কমপ্লেক্স এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।

মধু খাওয়ার অপকারিতাঃ

মধু খাওয়ার যেরকম বেশ কিছু উপকার রয়েছে তেমনি কিছু অপকারও রয়েছে। নিয়মিত মধু খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে গ্লুকোজ বেশি পরিমাণ তৈরি হয় যা মস্তিষ্কের সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়। মধুতে আছে শর্করা ক্যালরি ও এবং প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট যা রক্ত শর্করা বাড়িয়ে দেয় তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের মধু খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক তা অবলম্বন করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মধু খাওয়া উচিত।
খালি পেটে মধু খেলে পেট ব্যথা হতে পারে আর যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের মধু এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। অতিরিক্ত মধু চাপ ফেলে হজম ক্ষমতার উপর। মধু দাঁতের জন্য ভালো তবে অতিরিক্ত মধু খেলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে যায়। মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্বন্ধে ভালো ভাবে জেনেই আমাদের মধু খাওয়া উচিত।

মধু খাওয়ার নিয়মঃ

মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা অনেকটা নির্ভর করে মধু খাওয়ার নিয়মের উপর। সঠিক নিয়মে মধু খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় তেমনি ভুল নিয়মে মধু খেলেও বেশকিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। গরম পানি বা গরম দুধের সাথে মধু খাওয়া ঠিক না। গরম দুধের সাথে মধু খেতে চাইলে দুধ ঠান্ডা করে তারপর মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।

মধু খাওয়ার সব থেকে ভালো সময় সকালে খালি পেটে। মধু কখনো গরম করে খাওয়া যাবে না। লেবুর রসের সঙ্গে মধু খেলে এসিডিটি কমে। রক্তনালীর সমস্যা দূর করতে মধুর সাথে দারুচিনি মিশিয়ে খেতে হবে। মধু আর দারচিনি নিয়মিত মিশিয়ে খেলে হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমে। যৌন দুর্বলতা কাটাতে প্রতিদিন ছোলার সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

এক চা চামচ তুলসী পাতার রস ও সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে কাশি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এক চা চামচ মধু ও এক চা চামচ আদার রস একসঙ্গে মিশিয়ে তিনি দুইবার খেলে সর্দি সেরে যায় ও রুচি বৃদ্ধি পায়।

লেখকের মন্তব্যঃ

প্রকৃতি থেকে পাওয়া মধু আমাদের অনেক উপকারী খাদ্য প্রাচীনকাল থেকে এটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবহার হয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে এটিকে মহা ঔষধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে । তাই আমাদের সুস্থ থাকতে ও আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অবশ্যই প্রতিদিন নিয়ম করে মধু খাওয়া উচিত । বর্তমানে বেশ কিছু মধু উৎপাদন খামার তৈরি হয়েছে।

এ খামারগুলো থেকে বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন ফুলের মধু পাওয়া যায়। যেমন শীতকালে সরিষা ফুলের মধু গ্রীষ্মকালে লিচু ফুলের মধু। আর কালোজিরা ফুল থেকে সংগ্রহ করা হয় কালোজিরা ফুলের মধু। সুন্দরবনে পাওয়া যায় খালিসা ফুলের মধু। সবরকম ফুলের মধুই ভালো তবে এখানে কালোজিরা ফুলের মধু সবচেয়ে উত্তম।

প্রিয় পাঠক, আমাদের এই পোস্টে দেয়া তথ্য যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে এবং যদি তা আপনাদের কোন উপকারে আসে তবে অবশ্যই পোস্ট আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url