মেহেদি পাতার ভেসজ গুনাগুণ ও ব্যবহার সম্বন্ধে বিস্তারিত জানুন

রোগ নিরাময়ে নিম পাতার ব্যবহারমেহেদি পাতার ভেষজ গুণাবলী সম্বন্ধে আমরা অনেকেই বিস্তারিত জানিনা। অনেকেই মনে করে এটি শুধু ডিজাইনের কাজে ব্যবহার হয়। কিন্তু এর রয়েছে বিস্তর ব্যবহার। এই সম্বন্ধে জানতে এবং কার্যকরী তথ্য পেতে অবশ্যই এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

মেহেদি পাতার ভেষজ গুনাবলি
এখানে আমরা আরো আলোচনা করেছি মেহেদী পাতার উপকারিতা, এর ভেষজ গুণ ও ব্যবহারের সঠিক নিয়ম যা জানতে আমাদের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকাঃ

মেহেদী গাছ আমাদের অনেকের পরিচিত একটি গাছ । মেহেদী একটি লম্বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এটি বহু শাখা যুক্ত উদ্ভিদ। মেহেদী প্রচন্ড তাপ সহনশীল উদ্ভিদ এটি। সর্বোচ্চ ৪৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় টিকতে পারে। আর তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এর নিচে নামলে এই উদ্ভিদ মারা যায়। গ্রামে অনেক বাড়ির আঙিনায় মেহেদী কাজ দেখা যায়।
মেহেদির ভেষজ গুণাবলী অনেক। রঙিন সব নকশাই হাত সাজাতে মেহেদী পাতার জুড়ি নেই। চুলের যত্নেও মেহেদী পাতা সমান কার্যকর। মানব জীবনে অনেক রোগের ক্ষেত্রেও মেহেদী পাতা থেকে উপকার পাওয়া যায়। মেহেদী আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হাতে রঙিন ডিজাইন করার জন্য। মেহেদি পাতার রস আমরা অনেকেই চুলে ব্যবহার করি।
মেহেদী পাতায় বিশেষ এক ধরনের গন্ধ থাকে। চুল দাড়ি হাত-পা নখ রাঙানোর জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে বিয়ে বা গায়ে হলুদের সময় কনের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এই মেহেদির বিকল্প নেই।মেহেদী পাতার ঔষধি গুন সম্পর্কে আমাদের অনেকের অজানা তাই আসুন জেনে নেই মেহেদী পাতার ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে।

মাথাব্যথা সারাতে মেহেদী পাতার ব্যবহারঃ

শুধু মেহেদির পাতা নয় মেহেদী গাছের ফুলও অনেক উপকারী । মেহেদী গাছের ফুলের পেস্ট বানিয়ে সাথে ভিনেগার দিয়ে ব্যথার স্থানে লাগালে আরাম পাওয়া যায় এছাড়া আপনি মেহেদী পাতার পেস্টও ব্যবহার করতে পারেন।

কাঁধের ব্যথাঃ

যাদের কাঁধে ব্যথা আছে তারা যদি মেহেদী পাতার রস এবং সরিষার তেল একসঙ্গে মিশিয়ে ঘাড়ে মালিশ করেন তবে ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়। গরুর ঘাড়ে ব্যথা হলেও গ্রামের মানুষজন মেহেদী পাতা বেটে গরম করে লাগিয়ে থাকেন ।

শরীরের দুর্গন্ধ রোধঃ

গ্রীষ্মকালে যাদের বেশি ঘাম হয় এবং গাড়ি দুর্গন্ধ হয় তারা বেনামুল ও মেহেদী পাতা সিদ্ধ করে গোসল করার পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে এবং সেই পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। তবে তারা শরীরের দুর্গন্ধ রোধে উপকার পাবেন।

নাড়ীব্রণে সমাধানঃ

নিশিন্দার পাতা ও মেহেদী পাতা একত্র করে বেটে নিয়ে তিলের তেলের সঙ্গে পাক করে ছেঁকে নিতে হবে। এই তেল লাগালে অনেক ক্ষেত্রে তা সেরেও যায়।

কানের পূজের সমস্যায়ঃ

কানের পুঁজ পড়ার সমস্যায় মেহেদি পাতার রস গরম করে দুই ফোঁটা করে দিলে চার থেকে পাঁচ দিনে পুজপড়া বন্ধ হয়। আবার অনেকেই মেহেদী পাতার রস দিয়ে তেল তৈরি করেও ব্যবহার করেন ।

চোখ ওঠার সমস্যায়ঃ

চোখ ওঠার সমস্যাই অল্প কয়েকটা মেহেদি পাতা থেঁতো করে গরম জলে রেখে সেটা ছেকে নিতে হবে এবং সেই জল চোখে দিলে চোখ ওঠা সেরে যায়। এমনকি যাদের চোখের কোণ থেকে পুজের মত পড়তে থাকে তারাও এটা থেকে উপকৃত হতে পারে।

লোলচর্মের সমস্যায়ঃ

যাদের মুখের চামড়া বা গায়ের চামড়া কুঁচকে ঢিলে হয়ে গিয়েছে বা ঝুলে গেছে তারা যদি এই মেহেদী পাতা রস দিয়ে তৈরি তেল ব্যবহার করেন তাহলে এ সমস্যা থেকে অনেকটাই সমাধান পাবেন।

হিমোগ্লোবিনঃ

আমাদের শরীরে রক্ত কণিকা কমে গেছে না ঠিক আছে এটা পরীক্ষা করা যায় মেহেদি পাতার রস হাতে লাগিয়ে যদি হিমোগ্লোবিন ভালো থাকে তাহলে রংটা লালচে আভা দিতে থাকে আর যদি হিমোগ্লোবিন কম থাকে লালচে কম হয়। এটি এখনো রাজস্থানের প্রাচীন পন্থী বৈদ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত আছে।

চুলের যত্নে মেহেদী পাতাঃ

চুলের যত্নে মেহেদি পাতার গুরুত্ব অত্যন্ত কার্যকরী। অনেক বিউটিশিয়ান চুলের যত্নে মেহেদী পাতা ব্যবহার করতে বলেন। চুল পড়া রোধে পাতা ব্যবহৃত হয়। কয়েকটি মেহেদী পাতা সাথে একটু সরিষার তেল দিয়ে জাল দিতে হবে তারপর হচ্ছে ঠান্ডা হলে মাথার তালুতে ব্যবহার করতে হবে । এটি এটি টাক পড়া প্রতিরোধ করে।

খুশকি দূর করতে মেহেদী পাতাঃ

খুশকি দূর করতে মেহেদী পাতা বেশ কার্যকরী। সরিষার তেল মেথি এবং মেহেদী পাতা সিদ্ধ করে একটি যৌগ তৈরি করে এটা চুলে ব্যবহার করতে হবে এবং এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন । এটি চুলকে খুশকি মুক্ত করবে এবং চুল ঝলমলে সুন্দর করবে।

চুলকানি বা ঘা শুকাতে মেহেদি পাতাঃ

চুলকানি শুকাতে মেয়েদের পাতা বিশেষ কার্যকরী । মেহেদি পাতার পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে এতে চুলকানির জ্বালাপোড়া হ্রাস করতে সাহায্য করবে । মেহেদি পাতা দিয়ে আপনি তৈরি করতে পারেন মাউথ ওয়াশ। মেহেদি পাতার গুঁড়ো পানিতে মিশিয়ে রাখতে হবে এবং এটা দিয়ে ফুলকুচি করতে হবে যা মুখের ঘা ভালো করে এবং মুখ জীবনমুক্ত করে তোলে।

পায়ের জ্বালাপোড়া কমাতে মেহেদী পাতাঃ

যাদের হাত পা জ্বালাপোড়ার সমস্যা আছে তারা মেহেদি পাতা ব্যবহার করতে পারেন । মেহেদী পাতা ভিনেগারে ভিজিয়ে একজোড়া মোজার মধ্যে রেখে দিতে হবে এবং সেই মোজা সারারাত পায়ে দিয়ে রাখতে হবে তাহলে পায়ের জ্বালাপোড়া অনেকটা কমে যাবে।

পা ফাটা রোধে মেহেদি পাতাঃ

পা ফাটা সমস্যাটা অনেকের সারা বছর থাকে আবার কারো কারো শীতকালে বেশি পরিমাণে পা ফাটে । এ সময় হাতের চামড়া ওঠার সমস্যা থাকে অনেকের । মেহেদী পাতা বেটে ফাটা জায়গায় প্রলেপ লাগিয়ে আধা ঘন্টা রাখতে হবে । এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে পা ফাটা রোধ হবে ।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মেহেদী পাতাঃ

মেহেদি পাতা হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে সহায়তা করে । মেহেদির রস বা বীজ নিয়মিত খেলে রক্তটা স্বাভাবিক থাকে । এটি ধমনীতে রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করে যার ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।

বাতের ব্যথায় কার্যকরী মেহেদী পাতাঃ

মেহেদির তেল বাত এবং বাত জনিত সবরকম ব্যথা দূর করতে কার্যকর । ব্যথার স্থানে মেহেদি তেল মেসেজ করে লাগাতে হবে। ভালো ফলাফল পেতে হলে এটি প্রতিনিয়ত দুই মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে।

পুরনো ক্ষত সারিয়ে তোলে মেহেদি পাতাঃ

পুরনো ক্ষত যেগুলো বারবার ফিরে আসে সেগুলোর সারিয়ে তুলতে মেহেদী পাতা সাহায্য করে। ক্ষতস্থানে মেহেদি পাতা বেটে লাগিয়ে রাখুন। এরকম নিয়মিতভাবে করলে ক্ষতস্থান আস্তে আস্তে শুকিয়ে ভালো হয়ে যাবে।

মেহেদি পাতার গুঁড়োর ব্যবহারঃ

মেহেদি পাতার গুঁড়ো এবং আমলা পাউডার মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে হবে । এটি মাথার তালুতে আলতো ভাবে মালিশ করতে হবে । এতে মাথার তালুর এলার্জি ও চুলকানি দূর হবে ।

মেহেদী পাতা ব্যবহারের নিয়মঃ

আমরা অনেকেই জানি মেহেদী পাতা অনেক উপকারী আমাদের ত্বকের জন্য চুলের জন্য। কিন্তু নিয়ম না মেনে মেহেদী পাতা ব্যবহার করলে উপকার পাবো না আমরা। তাই নিয়ম মেনে আমাদের মেহেদী পাতা ব্যবহার করা উচিত। অনেকেই মেহেদী পাতা পেস্ট করে সরাসরি চুলে ব্যবহার করেন।
এমনটা না করে চুল ও মাথার স্ক্যাল্পে মেহেদির গুনাগুন ও উপকারিতা পেতে মেহেদী পেস্ট একটি পাতলা কাপড়ের মাধ্যমে এর সবটুকু রস বের করে নিতে হবে এবং এই রস টুকুই মাথার স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে লাগাতে হব। এরপর ৩-৪ ঘন্টা অপেক্ষা করে ভালো ব্রান্ডের শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। এর ফলে চুল তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে এবং চুল হয়ে উঠবে ঘন কালো ও উজ্জ্বল যা সমান নজর কাড়বে।

লেখকের মন্তব্যঃ

মেহেদী পাতা আমাদের জন্য অনেক উপকারী ও ভেষজ গুণ সম্পন্ন। এতে আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এবং অনেক রকমের রোগের ক্ষেত্রেও উপকারে আসে। বাজারে অনেক কোম্পানির মেহেদী কিনতে পাওয়া যায় যেটা আমরা হাত রাঙাতে ব্যবহার করি। এইটা আমাদের ব্যবহার করা একেবারে ঠিক না কারণ এতে অনেক রাসায়নিক উপাদান মিশানো থাকে।

সম্ভব হলে অবশ্যই আমাদের গাছ থেকে পাতা তুলে হাত রাঙানোর কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। আর সরাসরি যদি গাছ থেকে পাতা তোলা সম্ভব না হয় তাহলে বাজারে কিছু মেহেদী পাতার গুঁড়ো পাওয়া যায় সেটাও ব্যবহার করতে পারেন। তাই আমাদের উচিত এই ঔষধি গুণসম্পন্ন মেহেদি পাতার সঠিক ব্যবহার করা ।

প্রিয় পাঠক, আমাদের এই পোস্টে দেওয়া নির্ভরযোগ্য তথ্যের মাধ্যমে যদি আপনাদের কোন উপকারে আসে তবে এটা অবশ্যই আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url