ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

সফট ড্রিংকসের ক্ষতিকর দিকডাব আমাদের প্রায় সকলের কাছেই অনেক পরিচিত ফল। ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আমরা অনেকেই জানিনা। প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিগুন সম্পন্ন ডাবের পানি আমাদের শরীরে কি কি উপকারে আসে তা এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের জন্য বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ডাবের পানির উপকারিতা
এই পোস্টে আমরা আরো আলোচনা করেছি ডাবের পানির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে,ডাবের পানির উপকারিতাও খাওয়ার নিয়ম সহ বিভিন্ন বিষয়ে যা জানতে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকাঃ

গ্রীষ্মকালে ডাবের পানি খেয়ে আমরা তৃপ্তি পায়। আমাদের তৃষ্ণা মিটে। কিন্তু একজন পুষ্টিবিদ বলছেন ডাব হচ্ছে অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল। ডাবের পানি ও শাস দুটোই খাওয়া যায় এবং বিশাল স্বাস্থ্যগণ সম্পন্ন। নিয়মিতভাবে কেউ যদি ডাবের পানি খায় তাহলে তার শরীর হবে বিষমুক্ত। কিছু কিছু রোগ আছে যা ধীরে ধীরে শরীর থেকে এমনি এমনি সরে যাবে।
ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ। এক কাপ ডাবের পানিতে যে পরিমাণ খনিজ পদার্থ আছে তা অনেক স্পোর্টস ড্রিংক এর চাইতেও বেশি। একটি কলার চাইতেও একটি ডাবে বেশি পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে। ডাবের স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন হয় মাটির গুনাগুনের উপর ভিত্তি করে।

যেমন ব্রাজিলের ডাব পানসে হলেও ভারতের ডাব মিষ্টি হয়। বাংলাদেশের ডাবের পানি বেশ মিষ্টি হয় আবার হালকা নোনতা স্বাদ থাকে। আমাদের শরীরের ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের কাজে ডাবের পানি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।

ডাবের পানির পুষ্টিগুণঃ

ডাবের প্রতি ১০০ গ্রাম পানিতে রয়েছে জলীয় অংশ ৯৫ গ্রাম, আমিষ ২.৩ গ্রাম, শর্করা ২.৪ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, মোট খনিজ পদার্থ ০.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০১ মিলিগ্রাম, আইরন ০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ১- ০.১১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম ও খাদ্য শক্তি থাকে ২৩কিলো ক্যালরি।

ডাবের পানির উপকারিতাঃ

চিকিৎসা ক্ষেত্রেঃ ডাবের পানিতে খনিজ লবণ পাওয়া যায় যা মানুষের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য প্রাণ। ডায়রিয়া হলে মানুষের দেহে ইলেট্রো লাইট কমে যায় যার ফলে মানুষ দুর্বল হয়ে যায়। এই সময় ডাবের পানি খেলে দেহে ইলেকট্রোলাইট ব্যালানসড হয় এবং শরীরটা স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসে।
 
ডাবের পানিতে কিনেটির থাকে যা স্নায়ুতন্ত্রের রোগে বিশেষ উপকারী। ডাবের পানি কিডনির পাথর সৃষ্টি রোধ করে এবং ডায়রিয়া, আলসার, মূত্রনালী সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। ডাবের পানিতে অ্যান্টিসেপটিক গুন থাকায় কাঁটা ছেড়ে জায়গায় ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

রোগ প্রতিরোধেঃ মানুষের শরীরে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় বিষয় হলো দেহের প্রকৃতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, থিয়ামিন ও পাইরিডোক্সিনের মত উপকারী উপাদানে ভরপুর ডাবের পানি। তাই ডাবের পানি নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরের রোগীদের ক্ষমতা এতটা বৃদ্ধি পায় যে কোনভাবেই জীবাণুরা ক্ষতি করার সুযোগ পায় না।

দাঁতের সুরক্ষায়ঃ ডাবের পানিতে আছে খনিজ লবণ ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাসের মতো উপাদানের উপস্থিতি। এই খনিজ লবণ দাঁতের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। দাঁতের মাড়িকে মজবুত করে। অনেকের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে এবং মাড়িয়ে কালচে লাল হয়ে যায়। খনিজ লবণ এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেয়।

ত্বকের জন্য উপকারীঃ ডাবের পানিতে রয়েছে প্রাকৃতিক ভিটামিন ও ভরপুর খনিজ। তাই ডাবের পানিতে ত্বক পরিষ্কার করলে অনেক উপকার হয় এটা গবেষণায় প্রমাণিত। এটি ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে এবং পানির ভারসাম্য বজায় রাখে। অ্যামিনো এসিড ও শর্করা থাকে বলে এটি শুষ্ক ত্বকে পুষ্টি যোগায়।

ডাবের পানিতে ইলেকট্রোলাইট থাকে যার ফলে এই পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করলে ত্বক মসৃণ হয়। ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায় ডাবের পানিতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যার ফলে এটি ব্রণ হওয়ার হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। ত্বকে ডাবের পানির বেশ কিছু উপকারিতা সংক্ষেপে

  • ডাবের পানি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়তে সাহায্য করে
  • কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে
  • আদ্রতা বজায় রাখে এবং ইলেক্ট্রো লাইটসের ভারসাম্য বজায় রাখে
  • কোলাজেন তৈরি করে
  • ত্বকের রং স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে
  • ব্ল্যাক হেডস দূরীকরণে সহায়তা করে

    তারুণ্য ধরে রাখতেঃ তারুণ্য ধরে রাখতে ডাবের পানির অবদান অপরিহার্য। ডাবের পানিতে উপস্থিত প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ আমাদের তারণ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। ডাবের পানি দেহের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা কমিয়ে শরীরকে ঠান্ডা রাখে। ডাবের পানি মিষ্টি হওয়া সত্ত্বেও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি উপকারী।

    শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করেঃ ডাবের পানিতে উপস্থিত পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের কারণে আমাদের শরীরে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা করে যার ফলে আমাদের শরীরে পানি ভারসাম্য রক্ষা থাকে।

    হজমে সহায়তা করেঃ ডাবের পানিতে আঁশ থাকে যার ফলে আমাদের হজমে সহায়তা করে। রোদের কারণে যদি আমাদের শরীরে তরলের ঘাটতি হয় তবে ডাবের পানি শরীরের তরল উপাদান ও আদ্রতা বজায় রাখে।

    গরমে ডাবের পানির উপকারিতাঃ আমাদের দেশে সাধারণত গ্রীষ্মকালেই বেশি ডাব খাওয়া হয়। তবে বলে রাখা ভালো যে ডাবের পানি শীতের দিনেও যেরকম উপকার করে গরমের দিনেও আমাদের শরীরে একই রকম উপকার করে। তাই শুধু গরম কালে না শীতকালেও আমাদের ডাব খাওয়া উচিত বিশেষ করে কচি ডাবের পানি।

    দেহ পানি শূন্য হলেঃ ডায়রিয়া বা কলেরা হলে রোগী ঘনঘন পাতলা পায়খানা ও বমি করে যার ফলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও খনিজ পদার্থ বের হয়ে যায়। এই ঘাটতি পুরনে ডাব মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

    ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণঃ ডাবের পানিতে থাকে অ্যামাইনো এসিড ও ডায়াটারি ফাইবার যা ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

    গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতাঃ

    গর্ভাবস্থায় একজন নারীর তার শরীরের জন্য অনেক ধরনের পুষ্টিকর উপাদানের দরকার হয়। ডাবের পানি সবকিছুর জন্য কাজ না করলেও কিছু কিছু বিষয়ে বেশ কিছু উপকার দেয়। যেমন

    • ডাবের পানিতে বিদ্যমান পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
    • আমাদের শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখে।
    • পটাশিয়াম সোডিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে ডাবের পানিতে যার ফলে আমাদের শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় থাকে।
    • ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ভ্রুনের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

      ডাবের পানি খাওয়ার নিয়মঃ

      ডাবের পানিতে যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলো থাকে তা আমরা সবাই নিতে চাই। অনেকে আবার ডাবের পানি কিভাবে খেতে হবে এর নিয়ম নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকি। ডাবের পানি খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। তবে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। যেমন খেতে হবে কচি ডাবের পানি দাম যত বয়স্ক হবে তত তার পানির সাথে চিনি পরিমাণ বেশি।
      ফলে সেটা ক্ষতিকর হবে। ডাব কাটা সাথে সাথে পানিটা খেয়ে নেয়া ভালো। ডাবের পানিতে কোন কিছু মিশিয়ে (যেমন চিনে লবণ গুড়) খাওয়া যাবেনা। যেকোনো সময়ই ডাবের পানি খাওয়া যায় তবে প্রচুর রোদ থেকে আসার পরে সাথে সাথে ডাবের পানি না খেয়ে একটু বিশ্রামের পরে ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে।

      ডাবের পানির অপকারিতাঃ

      প্রত্যেকটি জিনিসেরই ভালো-মন্দ দিক থাকে। ডাবের পানির যেরকম উপকারিতা অনেক সেরকম কিছু অপকারিতা আছে। একটা নির্দিষ্ট নিয়ম করে ডাবের পানি খাওয়া উচিত। উপকারী বলেই যখন তখন ডাবের পানি খাওয়া ঠিক না এতে বরং ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত ডাবের পানি কারো কারো জন্য ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।
      বলা হয় ডাবের পানি কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে কিন্তু যারা কিডনি রোগী আছেন তাদের ডাবের পানি পান করা ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই কিডনি রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডাবের পানি পান করতে পারবেন। কোন কোন এলার্জি রোগী ডাবের পানি পানে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।

      সুতরাং এলার্জি আছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডাবের পানি খেতে পারবেন। যারা ঠান্ডা জড়িত রোগে ভুগেন বা সর্দির সমস্যা আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দামী পানি খেতে পারেন। ডাবের পানিতে রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম,ও ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইট ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

      কিন্তু শরীরে এগুলোর কোন একটি মাত্রা বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইট, ডায়াবেটিসের ভারসাম্য বজাই নাও থাকতে পারে।

      লেখক এর মন্তব্যঃ

      ডাবের পানির উপকারিতা পেতে হলে আমাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে খেতে হবে ডাবের পানি। এটি যেহেতু একটি প্রাকৃতিক উপাদান তাই দীর্ঘদিন না খেলে এটা থেকে প্রাপ্ত উপকার বোঝা যাবে না। আমরা অনেকেই দু একদিন ডাবের পানি খেয়ে এর উপকার আশা করি কিন্তু আসলে উপকার পেতে চাইলে নিয়মিত ডাবের পানি পান করতে হবে।

      খুব বেশি ডাবের পানি পান করার দরকার নেই তবে নিয়ম করে নিয়মের পানি পান করলে উপকার পাওয়া যাবে। কিডনি রোগে সহ অন্যান্য রোগীরা ডাবের পানি খাওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

      প্রিয় পাঠক, ডাবের পানির উপকারিতা সম্বন্ধে এখানে যে তথ্য দেওয়া আছে তা যদি আপনাদের উপকারে আসে তবে প্লিজ পরিচিতদের মাঝে এই পোস্টটি শেয়ার করে দিবেন।

      এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

      পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
      এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
      মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

      অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

      comment url