শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়গুলি সম্বন্ধে জানুন

মধু খাওয়ার ১৮টি উপকারিতাশীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চান। কিন্তু সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পান না। আমাদের এই পোস্টে ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি যেগুলো জানতে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

শীতে ত্বকের যত্ন
এখানে আমরা আরো আলোচনা করেছি শীতকালে ত্বকের সমস্যা ও সমাধানের ঘরোয়া উপায়সহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা জানতে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

ভূমিকা

সারা বছর আমাদেরকে ত্বকের যত্ন নিতে হয়। কিন্তু শীতকালে কিছুটা বাড়তি যত্ন লাগে, সাধারণ যত্ন নিলে চলে না। শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়া ও বাতাসে আদ্রতা কম থাকে বলে আমাদের ত্বকের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। এই সময়ে আমাদের ঠোঁট ফাটা, ত্বক খসখসে হওয়া, কুঁচকানো, কালো হয়ে যাওয়া, ব্ল্যাকহেডস সহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
যার ফলে আমাদের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন পড়ে। যদিও শীতে আমাদের ত্বকের একটা বাড়তি যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে কিন্তু আমরা বাড়তি যত্ন নিতে পারি না। আমাদের প্রতিনিয়ত পার্লারে যাওয়াও সম্ভব হয়ে ওঠে না।

ফলে শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় গুলো আমরা মেনে চলতে পারি। শীতকালে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে আমাদের ত্বককে রক্ষা করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা

শীতকালে আমাদের ত্বকের প্রধান সমস্যা হলো ত্বকের শুষ্ক ভাব। আর এই শুষ্ক ভাব দূর করতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। যত বেশি পানি পান করা হবে ত্বক তত আদ্র থাকবে। বেশি পানি পান করলে আমাদের শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায় আমাদের মুখের তেলের ভারসাম্য বজায় থাকে। 

ব্রণ পরিস্কার বলি রেখা কমাতেও সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা যায় যদি একজন মহিলা দিনে ২ লিটার এবং একজন পুরুষ যদি দিনে ৩ লিটার পানি পান করেন তবে তার ত্বক সহজে শুষ্ক হয় না।

মধু এবং ডিমের সাদা প্যাক

মধু এবং ডিমে এমন কিছু সেরা উপাদান আছে যা মানুষ যুগ যুগ ধরে তাদের ত্বকের যত্নে ব্যবহার করে আসছে। এই প্যাকটি ব্যবহারের ফলে ত্বকে সঠিক আর্দ্রতা ফিরে আসে যার ফলে ত্বক হয় নরম ও উজ্জ্বল। শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি অন্যতম উপায়।

কলার ফেসপ্যাক

যাদের মুখের ত্বক শুষ্ক তারা কলার তৈরি ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারে। কলা প্রাকৃতিকভাবেই ত্বকের রুক্ষ ও শুষ্কভাব দূর করতে অনেক কার্যকরী। কলা দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক তৈরি করতে আপনাকে প্রথমে কলা ম্যাশ করে নিতে হবে এবং তার সাথে দুধ ও মধু মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে এবং ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে।
একটি পাকা কলার সাথে এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মেশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। ২০/২৫ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে ২/৩ দিন ব্যবহার করতে হবে।

অ্যালোভেরা ও শশা

অ্যালোভেরা ও শসা এই দুটিই আমাদের ত্বক সুরক্ষায় বেশ উপকারী। ত্বকের যত্নে এক টেবিল চামচ এলোভেরা জেল ও এক টেবিল চামচ শসার পেস্ট এর সাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে হবে এবং এই প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে। এর ফলে ত্বকের কালো বা রোদে পোড়াভাব দূর করতে সাহায্য করবে।

দুধ ও কাজু বাদামের ফেসপ্যাক

দুধে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের ত্বকের সুরক্ষায় বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কাজুবাদাম ও দুধের ফেসপ্যাক তৈরি করতে আমাদের নিতে হবে ৮/১০ টি কাজুবাদাম। কাজুবাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়ানোর পরে দুই টেবিল চামচ দুধের সাথে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।

এইবার এই মিশ্রণটি তোকে আলতো করে লাগাতে হবে। এর ফলে ত্বক নরম ও কোমল থাকবে এবং এটি ময়েশ্চারাইজারের মত কাজ করে।

বেসন ও টক দইয়ের ফেসপ্যাক

ত্বকের টানটান ভাব ও উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে বেসন অনেক কার্যকরী একটি উপাদান। টক দই ও বেসনের ফেসপ্যাক তৈরি করতে আপনারা প্রথমে ১ টেবিল চামচ টক দই ও ২ টেবিল চামচ বেসন একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন।
এরপর ভালোভাবে সমস্ত মুখে লাগিয়ে নিন এবং শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন। ত্বক ভেজা অবস্থাতেই ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

মধু ও পেঁপের তৈরি ফেসপ্যাক

মধু ও পেঁপে দিয়ে তৈরি করা প্যাকটি আপনি পুরো বডিতে ব্যবহার করতে পারবেন। এই প্যাক তৈরি করতে আপনাকে এক কাপ পাকের সাথে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এই পেস্ট পুরো বডিতে লাগিয়ে কমপক্ষে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। 

এরপর পানি দিয়ে পুরো বডি ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ১/২ দিন ব্যবহার করলে দেখতে পাবেন শরীরের ত্বকে শুষ্ক ভাবটা অনেকটা কমে গেছে এবং এক্সট্রা গ্লো দেখা দিচ্ছে। শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে এটি বেশি জনপ্রিয়।

মুলতানি মাটি ও চন্দনের গুড়া

যাদের মুখের ত্বক তৈলাক্ত তারা এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাক তৈরি করতে মুলতানি মাটি, চন্দনের গোড়া ও শসার রসের প্রয়োজন হয়। এই তিনটি উপকরণ দিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখতে হয়। শুকিয়ে যাওয়ার দশ মিনিট পরে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ত্বকের তৈলাক্ততা কেটে যাবে এবং উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।

মধু কলা ও টমেটো

শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে মধু কলা ও টমেটো ত্বকের জন্যে দারুন ভাবে কাজ করে। শীতকালে ত্বকের যত্নে এ উপাদান গুলো ব্যবহার করা যায়। এই উপাদানগুলো যেহেতু সহজলভ্য তাই এটি ব্যবহার করাও সহজ সবার পক্ষে।

কলার পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে প্রথমে এবং তার সাথে মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে এবং শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। তাছাড়া টমেটোর রসের সাথে মধু মিশিয়ে একই নিয়মে লাগালেও ত্বকের আদ্রতা বাড়ে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ে।

অ্যাপল ফিডার ভিনেগার

আধা চামচ এপেল সিডার ভিনেগার, আধা চামচ পানি, আধা চামচ মধু, ২ চামচ গোলাপ জল, কয়েক ফোটা অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। কনুই, হাটু ও হাতে পায়ে ভালো করে মালিশ করে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে এবং ধুয়ে ফেলতে হবে ঠান্ডা পানি দিয়ে। এর ফলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

ওটমিল ও দুধ

৩ চামচ ওট মিল, আধা কাপেরও কম দুধ ও এক চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে হবে। প্যাক তৈরির পরে এটি মুখে মেখে দশ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলতে হবে ঠান্ডা পানি দিয়ে। এতে মুখের উজ্জ্বলতা বাড়বে।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা আমাদের ত্বকের জন্য বিশেষভাবে উপকারে। অ্যালোভেরা আমাদের ত্বকের জন্য এতটাই উপকারে যে এটা সঙ্গে অন্য কিছু মিক্স করা দরকার হয় না। অ্যালোভেরার পাতার ভিতরে যে জেল থাকে সেটা সরাসরি মুখে মাখা যায়।

নিম পাতা ও হলুদ

নিম পাতা ও হলুদ আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী উপাদান। নিম পাতার পাউডারের সঙ্গে হলুদ গুঁড়ো ও মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। মুখে দশ মিনিট লাগিয়ে রেখে তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে।

দই ও মধু

আধা কাপ দইয়ের সঙ্গে ৩ চামচ মধু এবং তিন চামচ চিনির দানা মিশিয়ে নিতে হবে। হালকা করে মিশিয়ে নিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে এবং এই পেস্ট মুখে ভালোভাবে মেসেজ করতে হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে টক দই ও দুধের ক্রিম

ত্বকের সব ধরনের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কাজ করে টক দই ও দুধ। এটি সহজলভ্য এবং ব্যবহার বিধি ও সহজ। ফলে এটি সহজে ব্যবহার করা যায়। টক দই, দুধের ক্রিম ও কয়েক ফোটা গোলাপ জল একসাথে নিয়ে চামচ দিয়ে নেড়ে খুব ভালো করে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে।

মিশ্রণটি ব্যবহারের আগে মুখ ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। মিশ্রণটি মুখে ব্যবহারের ১৫/২০ মিনিট পরে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে মুখের উজ্জ্বলতা বাড়বে।

গাজরের পেস্ট

শীতের শুষ্ক আবহাওয়া আমাদের ত্বক তার কোমলতা হারিয়ে ফেলে। শীতকালে গাজর পাওয়া যায় যা আমাদের ত্বকের কোমলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। আমাদেরকে প্রথমে কচি গাজরের পেস্ট বানাতে হবে এবং সাথে সামান্য চন্দন মিশ্রিত করতে হবে। 

এই মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর্যন্ত রাখতে হবে এবং পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে আমাদের ত্বকের কোমলতা ফিরে আসবে।

বাদাম তেল

বাদাম তেল আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বাদাম তেল উপযুক্ত আদ্রতা ও প্রাকৃতিক আভা বজায় রাখে। বাদামের তেল মুখে মেসেজ করে মাখা যায় এবং ভালো ফলাফল পেতে সারারাত রেখে দেওয়া যেতে পারে। উজ্জ্বল ত্বক পেতে নিয়মিত প্রতিদিন ব্যবহার করতে হবে।

লেখক এর মন্তব্য

শীতকালের এই বৈরী আবহাওয়ার জন্য মূলত আমাদের ত্বকের একটা বাড়তি যত্ন করা লাগে। ত্বক নিয়ে আমরা যতটা চিন্তিত হয়ে শীতকালে অন্য ঋতুতে এইটা আমাদের ভাবনার বিষয় হয় না। শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় গুলো অনেক উপকারী প্রমাণিত হয়। 

আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে প্রায়ই আমরা পার্লারে যেতে পারি না তাই ঘরোয়া উপায়ে তবে যত্ন করাটা সহজ হয় আমাদের জন্য। ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত উপাদানগুলো অনেকটাই সহজলভ্য হয় যার ফলে ত্বকের যত্ন নেওয়া সহজ হয়। সবসময়ই আমাদের ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত। 

কারণ ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নেওয়ার উপাদান গুলো প্রাকৃতিক হয় আমাদের তো এতে সুস্থ থাকে। কেমিক্যাল মিশ্রিত বিভিন্ন কোম্পানির প্যাক ইউজ করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। তাই পার্লারে না গিয়ে শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে আমাদের ত্বকের যত্ন করে যাওয়া উচিত।

প্রিয় পাঠক, আমার এই পোস্টে দেয়া তথ্যের মাধ্যমে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের মাঝে এই পোস্টটি শেয়ার করে দিবেন যাতে তারা এ বিষয়গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url