শসার পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা

ইসবগুলের ভূসি খাওয়ার সঠিক নিয়মশসার পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই সচেতন নই। অনেকেই এটাকে আমরা সাধারণ সবজি মনে করি। কিন্তু শসাতে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন, মিনারেলসহ আরো উপকারী উপাদান যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং আমাদের সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।

শসার পুষ্টিগুন ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
এখানে আমরা আরো আলোচনা করেছি শসার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে, শসা খাওয়ার উপকারিতা ও ওজন কমাতে শসার কার্যকারিতা সম্পর্কে। সুতরাং বিস্তারিত জানতে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকাঃ


শসা আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি সবজি। প্রতিনিয়ত খাবারের তালিকা শসা সাধারণত সালাদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শসার পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুসারে শশা একটি ফল। কারণ ফুল থেকে হয় শসা যাতে থাকে বীজ। এই সংজ্ঞা অনুসারে অনেক সবজি কিন্তু ফল যেমন মটরশুঁটি, টমেটো, কুমড়া ইত্যাদি।
ফল খাওয়া যে রকম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তেমনি অনেক উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে সহায়ক এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলোকে বের করে দেয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম ফাস্টফুড খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে যে টক্সিন তৈরি হয় তা মুক্ত রাখতে শসা যথেষ্ট সাহায্য করে। শসা আমাদের শরীরকে ডিটক্সিফাই করে।

শশাই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, সিলিকা, পটাশিয়াম ও আশ যা আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ ও নিম্ন রক্তচাপ দুটোই নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং শসা দারুন উপকারে একটি সবজি। আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে এবং রূপচর্চায় অনেক আগে থেকেই শসা ব্যবহার হয়ে আসছে।

শসার পুষ্টিগুণঃ


হাইড্রেটিং সবজি গুলোর মধ্যে শসা অন্যতম। বিশেষজ্ঞদের মতে শশায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি ভিটামিন C এবং K রয়েছে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। শসাতে আরো রয়েছে ভিটামিন বি, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, প্যানটোথেনিক, ভিটামিন বি৫ ও বি৬, ফোলেট,গ্লুকোজ, স্নেহ পদার্থ, ফাইবার, প্রোটিন, বিভিন্ন ধরনের খনিজ পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, সোডিয়াম, দস্তা, ক্যালোরি এবং প্রচুর পরিমাণ পানি।

শসা খাওয়ার উপকারিতাঃ


হজমে সহায়তা করেঃ শসাতে বিদ্যমান ভিটামিন, খাদ্য আঁশ ও পানি খাবার হজমে সাহায্য করে।প্রতিদিন নিয়মিত শসা খেলে আমরা আমাদের পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে পারি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হবে।

হাড় মজবুত করেঃ শসাতে রয়েছে ভিটামিন কে ও ক্যালসিয়াম যা আমাদের শরীরের হার মজবুত করতে সাহায্য করে। ভিটামিন কে হাড়ের ক্ষয়ের ঝুঁকি কমাতে এবং ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে।

হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখেঃ শসাতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন কে। শসার এই তিনটি উপাদান হার্ট কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত শসা খেলে তা আমাদের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ভিটামিন কে সাহায্য করে রক্ত জমাট বাঁধতে এবং রক্তে ক্যালসিয়াম প্রবাহের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

নখ ও চুলের উন্নতিঃ শসা খেলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সুস্থ থাকে যার প্রভাব পড়ে চুল ও নখে।

হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায়ঃ শসাতে থাকা ফসফরাস হরমোন নিয়ন্ত্রণের মূল পুষ্টি উপাদান। শসাতে থাকা প্রায় ৪ শতাংশ ফসফরাস যা প্রাপ্তবয়স্কের জন্য খুব প্রয়োজন। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় শসা রাখা উচিত।

মানসিক চাপ কমাতেঃ শসা তে পাওয়া যায় ভিটামিন বি১, বি৫ ও বি৭। যা আমাদের উদ্বেগ ও চাপ কমাতে সাহায্য করে।

আর্দ্রতা রক্ষায়ঃ শসা আমাদের শরীরকে আদ্র রাখতে সাহায্য করে। শসাতে বিদ্যমান প্রায় ৯৫ শত শতাংশই পানি যা আমাদের শরীর আদ্র রাখতে ও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল করেঃ শসা তে বিদ্যমান ঠান্ডা ও আদ্র রাখার উপাদান মলিন ও শুষ্ক ত্বক কোমল করতে সাহায্য করে। ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, রিবোফ্লাভিন ও জিংক আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা রক্ষা করে। বিউটি ক্রিমের বদলে আমরা যদি নিয়ম করে প্রতিনিয়ত শসা খায় যা আমাদের তপ উজ্জ্বল করতে সহায়ক হবে।

ভিটামিনের ঘাটতি পূরণঃ আমাদের শরীরে রোজকার জীবনে যেসব ভিটামিনের প্রয়োজন হয় তার বেশিরভাগ ভিটামিন ই শসার মধ্যে আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শসার মধ্যে থাকা এই ভিটামিন গুলো আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যার ফলে আমরা সুস্থ থাকি। তাই আমাদের শরীরের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণে সারা বছর পাওয়া যাওয়া এই শসা আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।

জয়েন্ট এর ব্যথা উপশম করেঃ আপনারা যদি কেউ মাঝেমধ্যেই জয়েন্ট ও পেশীর ব্যথায় ভোগেন তাহলে অবশ্যই আপনার খাবার তালিকায় প্রচুর সমস্যা ও অন্যান্য সবুজ সালাদ যোগ করুন। শসা কেবল আমাদের ত্বকের জন্যই ভালো নয় এটি হাড় ও পেশিকে শক্তিশালী করে। এটি ব্যথার ক্ষেত্রে ভালো নিরাময় এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।

শসা হলো দীর্ঘস্থায়ী ব্যাথা এবং আর্থ্রাইটিস থেকে মুক্তির একটি প্রাকৃতিক উপাদান। শসার কুলিং ইফেক্ট আমাদের শরীরের প্রথাহজনক প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সাথে ভালো মানের এনজাইম তৈরি করে যা ব্যথা উপশমে সাহায্য করে।

মাড়িক সুস্থ রাখতেঃ দাঁত ও হাড়ের সুস্থতা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মুখের পিএইচ ও এসিডের ভারসাম্য বজায় রাখে শসা। যার ফলে শরীরে কাটা ছেঁড়া এবং ক্ষত প্রতিরোধ ও নিরাময় করা সহজ হয়। নিয়মিত শসা খেলে দাঁতের রোগ ও মাড়ির রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

রক্ত প্রবাহ ও টিস্যু তৈরিঃ শসা আন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শসা বিদ্যমান উচ্চ এন্টিঅক্সিডেন্ট রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ, ফ্রি র‍্যাডিকেলের সঙ্গে মোকাবেলা এবং শরীরের টিস্যু বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ ও সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। সুতরাং আমরা সহজেই অনুধাবন করতে পারি শসা আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী।

টক্সিন বের করতে সাহায্য করেঃ শসা নিয়মিত খেলে তা মলত্যাগের রুটিন সহজ হয়ে যায়। এটি শরীর থেকে খারাপ জীবাণু ও বিষাক্ত পদার্থগুলোকে সহজে বের করে দেয়। ফলে হজম সহজ স্বাস্থ্যকর হয়। শসা আমাদের শরীরের পানি শূন্যতা দূর করার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এতে থাকা ফাইবার মলত্যাগের ফ্রিকোয়েন্সি বানাতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

কোলেস্টোরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেঃ নিয়মিত শসা খাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো এতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর মাত্রার পেকটিন। এটি হচ্ছে এক ধরনের প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া দ্রবণীয় ফাইবার। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং টক্সিন দূর করে আমাদের শরীর থেকে।

ওজন কমাতে শসার উপকারিতাঃ


শরীরের অতিরিক্ত ওজন বা মেদ কমানোর জন্য অনেকেই প্রথমে শসা খাওয়ার পরামর্শ দেন। অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য যে ডায়েট চার্ট করা হয় তার জন্য একটা মূর্খ উপাদান শসা। সারা বছর পাওয়া যায় এবং সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই শসা খাওয়ার তালিকায় রাখতে পারে। শসা হজমে খুবই সহায়ক এবং সেই সঙ্গে ফাইবার ও পর্যাপ্ত পানি থাকে এই সবজিতে।
এতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় ওজন কমানো বেশ সহজ হয়। শসাই এক্সট্রা ফ্যাট প্রোটিন(২ গ্রাম), কার্বোহাইড্রেট (২ গ্রাম) ভিটামিন কে (৬২% আরডিআই), ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে। শসাতে কোন ফ্যাট নেই। তাই আমাদের দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে শসার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সুতরাং ওজন কমাতে শসার উপকারিতা পেতে আমাদের নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে শসা খেয়ে যেতে হবে।

খালি পেটে শসা খাওয়ার উপকারিতাঃ


খালি পেটে শসা খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা আছে। খালি পেটে শসা শসার জোস বা সালাদ খেলে শরীর আমাদের শরীর ভালোভাবে হাইড্রয়েড থাকে ভাইব্রেটেড হাইড্রেটেড থাকে। শসা আমাদের শরীরকে ডিটক্স করার জন্য সেরা পানীয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

এর রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অসাধারণ। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে শসার কোন তুলনাই হয় না। ওজন কমানো শসার অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারের মধ্যে অন্যতম একটি। এটি সহজেই সোডা পানীয়র জায়গা করে নিতে পারে।

শসা খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ


শসা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী একটি খাবার। তবে উপকার পেতে হলে শসা আমাদের সঠিক নিয়মে খেতে হবে। নিয়ম মেনে শসা না খেলে উপকারের চাইতে হয়তো আমরা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হব। শসাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল। এছাড়াও শসাতে যে প্রচুর পরিমাণে জলীয় পদার্থ থাকে তা আমাদের শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে।

কিন্তু শসা খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের মাঝে বেশ কিছু ভুল ভ্রান্তি আছে। চিকিৎসকের মতে শসা সবসময়ই দিনের বেলা খাওয়া উচিত। কারণ এ সময়ে শসা খেলে বেশ কিছু পোষ্টিক উপাদান পাওয়া যায়। আর তাই দিনের বেলা না খেয়ে রাতের বেলা শসা খেলে উপকারের চেয়ে অপকারী বেশি হয়। শসাতে কুকুরবিটাসিন থাকে যা হজমের জন্য অত্যন্ত উপকারী। 

রাতে আমাদের শরীরে পানির পরিমাণ ঠিকই থাকে তাই রাতের বেলা শসা খেলে পাচন সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। বেশিরভাগ চিকিৎসক ও নিউট্রিশনিস্ট মনে করেন দিনের বেলা শসা খাওয়া উচিত। শশায় থাকা ৯৫ শতাংশ জলীয় পদার্থ আমাদের শরীরকে ভালো রাখে পানের অভাব দূর করে এবং আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

শসা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ


শসা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। শসা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যার ফলে আমরা সুস্থ থাকি। হৃদপিণ্ড ভালো রাখা, ব্যথায় প্রশান্তি দেওয়া ও ওজন কমানো সহ রয়েছে শসার নানাবিধ উপকারিতা। হাইড্রেশন শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ফাংশন বজায় রাখার চাবিকাঠি। আমাদের শরীরের জন্য প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ক্লাস পানি খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এক্ষেত্রে শসা আমাদের শরীরের হাইড্রেশন চাহিদা পূরণ করে থাকে। শসাতেই রয়েছে ৯৫% পর্যন্ত পানি যা শরীর হাইড্রেটেড রাখতে এবং দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। ফল ও শাকসবজির মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি শরীরে পৌঁছালে কোষগুলো সঠিক উত্তরটি পায় যার ফলে আমরা ক্লান্তির সাথে লড়াই করতে পারি এবং সারাদিন শক্তি বজায় থাকে।

শসার জলীয় অংশ তথা পানি দেহর্য ও দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। নিয়মিত শসা খেলে কিডনিতে শ্রেষ্ঠ পাথর গলিয়ে ফেলতে সহায়তা করে। ইউরিনারি, ব্লাডার, লিভার ও প্যানক্রিয়াসের সমস্যার সমাধানও কাজ করে।

রূপচর্চায় শসার ব্যবহারঃ


রূপচর্চায় শসার ব্যবহার নতুন কিছু নয়। সতেজ ত্বকের জন্য শসার ব্যবহার যে অপরিহার্য তা কম বেশি সবারই জানা। শসাতে থাকে প্রায় ৯৫ ভাগেরও বেশি পানি। শসা আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি ত্বক ও চুলের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে রূপচর্চায় শশা ব্যবহার করে সঠিক উপকার পেতে হলে শসার সঠিক ব্যবহারের পদ্ধতি আমাদের সকলের জানা উচিত।

  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে শসা। এতে রয়েছে মাইন্ড ব্লিচিং উপাদান যার ফলে ত্বকের বিভিন্ন ভাব দূর হয়। ঠান্ডা শসার টুকরা ত্বকে ঘষে নিতে হবে সরাসরি এবং কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হবে ত্বক। অথবা একটি শসা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিয়ে তার সাথে দুই চামচ লেবুর রস এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে নিতে হবে। এই পেস্টটি মুখে ও ঘাড়ে লাগিয়ে বিশ মিনিট রেখে দিতে হবে শুকানোর জন্য। এর ফলে চেহারার রুক্ষ ভাব দূর হয়ে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
  • ব্রণের দাগ দূর করতে শসা বেশ উপকারী। তুলার বল বানিয়ে শসার রসে ডুবিয়ে সে বল দিয়ে ব্রণের জায়গায় চেপে দিতে হবে দিনে ২-৩ বার। আস্তে আস্তে ব্রণের দাগ দূর হয়ে যাবে।
  • ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে শসা। শসা প্রাকৃতিক টোনা হিসেবে কাজ করে। শশা কেটে ফ্রিজে রেখে দিয়ে ঠান্ডা করে রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহামহিলাদেরর করতে হবে। যাদের তৈলাক্ত ত্বক তারা কাঁচা হলুদ, লেবুর রস ও শশা একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর ধুয়ে ফেলুন। এতে স্কিনের অতিরিক্ত তেল দূর হবে।
  • ত্বকের রোদ পোড়া দাগ দূর করতে শসা খুবই কার্যকর। এর জন্য প্রথমে শসা স্লাইস করে কেটে রোদে পোড়া জায়গায় নিয়মিত লাগাতে হবে। তবে রোদে পোড়া দাগ দূর হবে।
  • শসা হলো প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা। তাই অতিরিক্ত গরমে আমাদের ত্বক লালচে হয়ে গেলে শসার ব্যবহারে ত্বক ঠান্ডা হয়।
  • চোখের নিচের বলিরেখা দূর করতে শসার রস ব্যবহার করুন। চোখের নিচে শসার রস লাগিয়ে না শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • শসা ব্যবহারে চোখের ডার্ক সার্কেল দূর হয়। এটি ব্যবহারে চোখের ফোলা ভাবও কমে।
  • বয়সের ঝাপ লুকাতে দুই চামচ ব্লেন্ড করা শসা, লেবুর রস, আধা চামচ মধু, দুই টেবিল চামচ টক দই, দুইটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ত্বকের রিংকেল দূর করে ত্বক টানটান ও সুন্দর করে।
  • শসাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সিলিকা যা নক শক্ত করে। তাই যাদের নখ ভেঙে যাওয়ার সমস্যা তারা নিয়মিত শসা খেতে পারেন।
  • চুলের বৃদ্ধিতে শসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ শসাতে রয়েছে সালফার, সোডিয়াম, সিলিকন, ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম এবং সবগুলো উপাদানে চুলের বৃদ্ধির জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়াও এটি চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। 
  • প্রথমে একটি খোসা ছাড়ানো শসা ব্লেন্ড করে নিতে হবে তারপর একটি ডিম ও তিন চামচ অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিক্স করে নিতে হবে। এরপর ব্লেন্ড করার শসা টিম ও অলিভ অয়েল সাথে শসার খোসার পেস্ট একসাথে মিক্স করতে হবে। এই প্যাকটি সমস্ত চুলে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখতে হবে তারপর শ্যাম্পু করে ধরে ফেলতে হবে। এতে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুলকে স্বাস্থ্যউজ্জ্বল করে তোলে।

    শসা খাওয়ার অপকারিতাঃ


    শসা আমাদের শরীরের জন্য যদিও অনেক উপকারী একটি সবজি কিন্তু এর কিছু অপকারিতা আছে। শসা একটি লো ক্যালোরি বা কম ক্যালরি যুক্ত খাবার। শসাতে রয়েছে বেশ কিছু পরিমাণ ভিটামিন মিনারেল ও আশ। এইসব ভালো পুষ্টিগুণ সম্পন্ন শসাও মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায় যখন কেউ কেউ মনে করে শুধু শসা খেয়ে ওজন কমানো যায়।

    শসা কি একমাত্র ওজন কমানোর ওষুধ মনে করে অনেকে। এই চিন্তা ভাবনা একেবারেই ঠিক না। ডাইটিসিয়ানরা ডায়েট চার্ট এ শসা রাখে কিন্তু শুধু শসা খেয়েই কখনো ওজন কমাতে বলেন না। কিন্তু অনেকেই ওজন কমানোর জন্য সব সময় শসা খেতে থাকে। যখন খিদে পায় তখনই শসা খায়। শসা যেহেতু কম ক্যালরিযুক্ত খাবার সেহেতু একনাগারে শসা খেলে ওজন কমে যাবে সেটা ঠিক কিন্তু শরীরও বিভিন্ন প্রশ্নের অভাবে দুর্বল হয়ে যাবে।

    অতিরিক্ত পরিমাণে শসা খেলে বদহজম, গ্যাসের সমস্যা, পেট ব্যথা ও বমি বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে। কেউ যদি এক মাস ধরে শসা খেতে থাকে সারাক্ষণ তবে তার শরীর দুর্বল হয়ে যাবে কাজ করা শক্তি পাবে না। রক্ত কমে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাবে।

    লেখক এর মন্তব্যঃ


    শসার পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। শসা নিঃসন্দেহে মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। অনেক পুষ্টি উপাদান এই শসার মধ্যে আছে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ত্বকের সমস্যার সমাধানেও শশা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে রূপচর্চায় শসার প্রচুর ব্যবহার হয়।

    কিন্তু শসা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের নিয়মটা অবশ্যই মেনে চলা উচিত। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না তাই নিম অনুযায়ী শসার ব্যবহার করা উচিত। তাই সুস্বাস্থ্যের স্বার্থেই আমাদের প্রতিদিন দুই থেকে তিনটির বেশি শসা খাওয়া উচিত নয়। এবং নিয়ম মেনে শসা খেলে আমরা সুস্থ থাকবো ভালো থাকবো।

    প্রিয় পাঠক শসার পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনাদের পরিচিতদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করে দিবেন।


    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url