অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো বর্নণা করা হল
কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্বন্ধে জানুনপ্রাকৃতিক গুন সম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ হচ্ছে অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নয়। অ্যালোভেরা পাতার মূল উপাদান হলো পানি যাতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস আছে যা আমাদের শরীরের নানা রকমের উপকার করে।
এই পোস্টটিতে আমরা আরো আলোচনা করেছি অ্যালোভেরা পাতার ভেষজ গুনাগুন, কি কি উপকার
করে ও ব্যবহারের নিয়ম। তাই সবকিছু জানতে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
ভূমিকাঃ
অ্যালোভেরার অপর নাম হচ্ছে ঘৃতকুমারী। এটি একটি অত্যন্ত উপকারী উদ্ভিদ।
অ্যালোভেরা শুধু ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী তা কিন্তু নয় মানুষের দেহের জন্য
যথেষ্ট উপকারী। এলোভেরা গাছটা দেখতে অনেকটা কাঁটাওয়ালা ফনিমনসার মতো। সাধারণত
শিকড় থেকে গজানো ডাল বা শাখার মাধ্যমে এই গাছ বংশ বৃদ্ধি করে।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমাতে শষার গুরুত্ব
এটি লিলি প্রজাতির উদ্ভিদ। সাধারণত এর দৈর্ঘ্য হয় প্রায় ১০ থেকে ১৫ ইঞ্চি।
ঘৃতকুমারের আদি নিবাস মাদাগাস্কার ও আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চলে। আজ থেকে প্রায় ছয়
হাজার বছর আগে মিশরে অ্যালোভেরার উৎপত্তি। এলোভেরা তে রয়েছে ২০ ধরনের খনিজ
পদার্থ।
মানব দেহের জন্য যে ২২টা অ্যামিনো অ্যাসিড প্রয়োজন এতে সবগুলো আছে। এছাড়াও
ভিটামিন A, B1, B2, B6, B12, C ও E আছে। তাইতো আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেয়
অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা।
অ্যালোভেরার উপকারিতাঃ
ওজন কমাতে অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরাই আছে প্রচুর পরিমাণে
এন্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান যা আমাদের শরীরের অতিরিক্ত মেদ চর্বি কমাতে সাহায্য
করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল ভিটামিন অ্যামাইনো এসিড এনজাইম যা আমাদের
স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ওজন কমায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ অ্যালোভেরা আমাদের শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অ্যালোভেরা হলো এন্টি মাইক্রোবিয়াল এবং
এন্টিফাঙ্গাল উপাদান সমৃদ্ধ একটি গাছ। এর জুস পান করলে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দেহের টক্সিন দূর করে দেহকে সুস্থ রাখে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ অ্যালোভেরায়ে আছে ভিটামিন সি যা মুখের
জীবাণু দূর করে, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া মাড়ি ফোলা বন্ধ করে। বিভিন্ন গবেষণায়
দেখা গেছে অ্যালোভেরার জেল মাউথ ওয়াশের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
মুখের ঘা সারাতেঃ মুখের ঘা সারাতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত কার্যকরী।
যাদের মুখে ঘা হয় তারা যদি অ্যালোভেরার জেল মুখে লাগিয়ে রাখেন তাহলে ঘা ভালো
হয়।
চুলের খুশকি সমস্যায়ঃ আমাদের চুলের খুশকির সমস্যায় অ্যালোভেরার কোন
তুলনা হয় না। ঝলমলে চুলের জন্য অ্যালোভেরা অনেক উপকারী।
মাংসপেশী ও জয়েন্টের ব্যথাঃ অ্যালোভেরা মাংসপেশির ব্যথা কমাতে
সাহায্য করে। যেখানে ব্যথা হয়েছে সেখানে যদি অ্যালোভেরা জেলের ক্রিম লাগানো যায়
তাহলে ব্যথা কমে যায়।
হজম শক্তি বৃদ্ধিঃহজম শক্তি বৃদ্ধিতে এলোভেরা জুস এক অনন্য সমাধান। এটি
অন্তরের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ফলে
হজম শক্তি বেড়ে যায়। অ্যালোভেরা ডায়রিয়ার বিরুদ্ধেও অনেক ভালো কাজ করে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধেঃ অ্যালোভেরা জুস রক্তের সুগারের পরিমাণ ঠিক
রাখে এবং মানবদেহে রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে বজায় রাখে। যারা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক
অবস্থায় নিয়মিত এলোভেরার জুস পান করবেন তাদের পক্ষে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা
সম্ভব। আর যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত আছেন তারা নিয়মিত খাওয়ার আগেও পরে
অ্যালোভেরার জুস পান করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ত্বকের যত্নেঃ ত্বকের যত্নে এলোভেরার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার সম্পর্কে
আমরা অনেকেই কম বেশি জানি। অ্যালোভেরা তে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান
ত্বকের ইনফেকশন দূর করে এবং ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।
রক্তচাপ কমাতেঃ হাজারো গুনাগুনের মধ্যে অ্যালোভেরার আরেকটি গুণাগুণ
হলো এটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরার ঔষধি গুন রক্তের কোলেস্টেরল,
রক্তে চিনির মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে সাহায্য করে।
দেহের ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণেঃ অনেক সময় দেহে কিছু ক্ষতিকর পদার্থ
প্রবেশ করে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি করতে পারে। যা আমাদের দেহের জন্য মোটেও ভালো
নয়। অ্যালোভেরার রস পান করলে আমাদের দেহে ক্ষতিপাত পদার্থ প্রবেশ করতে পারে না।
আর যদি প্রবেশ করে তবে অ্যালোভেরার পুষ্টিগুণ তা অপসারণ করে। এক্ষেত্রে এলোভেরার
জুসের গুন অপরিসীম।
ক্লান্তি দূর করতেঃ দেহের ক্লান্তি ও দুর্বলতা দূর করতে অ্যালোভেরার
জুসের অনেক গুন। যদি কেউ নিয়মিত ভাবে অ্যালোভেরার জুস পান করে থাকে তাহলে তার
দেহের ক্লান্তি দূর হবে এবং দেহ সুন্দর সতেজ থাকবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ আজকাল অনেক মানুষ কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন। যারা
এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তারা নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করুন। প্রতিদিন
সকাল এবং রাতে এক চামচ অ্যালোভেরা রস এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে
হবে। এলোভেরায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইবার যা রেচনক্রিয়ার গতি
স্বাভাবিক রাখে এবং পাকস্থলীকে ঠান্ডা রাখে।
অ্যালোভেরা খাবার নিয়মঃ
অ্যালোভেরার জুস সব বয়সের মানুষই খেতে পারে তবে ইচ্ছামতো না খেয়ে নিয়মিত
পরিমাণ মতো খেলেই বেশি উপকার পাওয়া যায়। দ্রুত উপকার হবে ভেবে প্রয়োজনের
তুলনায় বেশি খেয়ে নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অ্যালোভেরা যেহেতু সুস্বাদু কোন
জিনিস না তাই নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে জুস বানিয়ে খেলে খারাপ লাগবেনা।
- এক গ্লাস পানি, অ্যালোভেরা দুই চামচ, এক চামচ লেবু, একটা গোলমরিচ গুড়া, এক চিমটি বিট লবণ ও প্রয়োজনমতো বরফকুচি দিয়ে ভালোমতো মিক্স করে নিতে হবে। এভাবে জুস বানালে খেতে খারাপ লাগবে না এবং শরীরও চাঙ্গা হবে।
- এই পদ্ধতিতে আপনি প্রথমে একটি ভালোবাসার পাতা নিয়ে সে তাতে রস করলো আলাদা করে নিন সাথে দুই চামচ মধু এক চিমটি বিট লবণ ও এক গ্লাস পানি সাথে স্বাদ অনুযায়ী বরফ কুচি মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। আশা করা যায় এই প্রক্রিয়ায় জুস বানিয়ে খেলে ভালো লাগবে।
কারো যদি অ্যালোভেরা খেতে কোন সমস্যা না থেকে থাকে তাহলে সবচেয়ে ভালো হয় রোজ
সকালে কুসুম গরম পানির সাথে দুই চামচ অ্যালোভেরা মিশিয়ে খেয়ে নিতে হবে। এতে
ভালই উপকার পাওয়া যায়। বাজারে কিনতে পাওয়া যায় অ্যালোভেরা জুস কিন্তু বাড়িতে
বানানোর জুস বেশি স্বাস্থ্য সম্মত।
অ্যালোভেরা জেল তৈরির নিয়মঃ
অ্যালোভেরা জেল তৈরি করার জন্য প্রথমে এলোভেরা পাতা থেকে নরম অংশটুকু বের করে
নিতে হবে এবং দুই চামচ মধু মিশিয়ে আইস ট্রেতে রেখে এক মাসের মতো সংরক্ষণ করা
যায।
- অ্যালোভেরার ২/৩টি পরিষ্কার পাতা নিয়ে ভেতরের জেলটুকু বের করে সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিক্স করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। কাঁচের বোতলে এটি সংরক্ষণ করে এক মাস পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন।
- লেবুর রস, ভিটামিন সি ক্যাপসুল ও অ্যালোভেরার রস একসঙ্গে ভালো করে মিক্স করে এটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায় দুই মাস পর্যন্ত।
অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারের নিয়মঃ
অ্যালোভেরা পাতার জেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এই যে পোড়া স্থানে লাগালে
উপকার পাওয়া যায়। ফোড়াতে লাগালে ব্যথা কমে যায়। হাঁপানি ও এলার্জি প্রতিরোধে
অ্যালোভেরা জেল বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
- মুখের ব্রণের সমস্যা সমাধানের জন্য এলোভেরা জেল এর সাথে একটু হলুদ, মধু ও গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ২০ মিনিট মুখে মেখে রেখে দিতে হবে তারপর ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণের সমস্যা দূর হবে।
- অ্যালোভেরার জেলের সঙ্গে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে তাহলে ত্বকের রোদ পোড়া ভাবটা দূর হবে।
পুরুষের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতাঃ
পুরুষ মহিলা সবার জন্যই এলোভেরা সমান উপকারী। পুরুষ হোক কিংবা মহিলা সবাই ত্বক ও
চুলের যত্নে এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারে। সারাদিন ব্যস্ততার পর যখন চুল রুক্ষ
হয়ে পড়ে তখন এলোভেরা ব্যবহারের মাধ্যমে চুল তার প্রাণবন্ততা ফিরে পাবে।
আরো পড়ুনঃ মেহেদি পাতার ১৬ টি উপকারিতা
বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক পুরুষের শারীরিক শক্তি শ্বাস পায় এবং যৌন ইচ্ছা কমে
যায়। আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যদি এলোভেরার জুস থাকে তবে আপনার যৌন
জীবন নিয়ে আর চিন্তা করা লাগবে না। এটা পুরুষ মহিলা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
অ্যালোভেরার অপকারিতাঃ
বেশিরভাগ মানুষের জন্যই এলোভেরা নিরাপদ এবং উপকারী কিন্তু কিছু মানুষের জন্য
এলোভেরা এলার্জির কারণ হতে পারে। এলার্জির লক্ষণ গুলির মধ্যে চুলকানি ফুসকুড়ি
থাকতে পারে। কিছু কিছু মানুষের ত্বকে জ্বালা হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ রোগ নিরাময়ে নিম পাতার প্রয়োজনীয়তা জানুন
আপনি যদি নিয়মিত কোন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে ওষুধ খেয়ে থাকেন তাহলে
অ্যালোভেরার জুস খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া
উচিত।
লেখক এর মন্তব্যঃ
অনেক গুনে গুণান্বিত অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী। এর ব্যবহার বহু যুগ ধরে চলে আসছে।
কিছু কিছু মানুষের জন্য এটি এলার্জির উদ্রেক করে কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের জন্য
এটি উপকারী। অ্যালোভেরা জেল উপকারি যখন এটিকে মানুষ জেল হিসেবে চামড়ায় প্রয়োগ
করে।
অ্যালোভেরা থেকে সর্বোচ্চ উপকার পেতে সঠিক নিয়মে ব্যবহার করা উচিত। অতিরিক্ত
ব্যবহারের ফলে শরীরে আরো রোগব্যাধি বিস্তার ঘটতে পারে।
প্রিয় পাঠক, অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানালাম যদি
আপনাদের এই তথ্যগুলো ভালো লাগে তবে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে
দিবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url