আপেল খাওয়ার উপকারিতাগুলো বিস্তারিত জেনে নিন
ডাবের পানি কি কি পুষ্টিগুন সম্পন্নসারা বিশ্বের প্রায় সব মানুষের কাছেই আপেল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নয়। আপেল খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে আপেল খেলে আমাদের শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে উপকৃত হবে।
এ পোষ্টের মধ্যে আমরা আরো আলোচনা করেছি আপেলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও আপেল
খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে তাই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকাঃ
আমাদের প্রায় সবার কাছে আপেল অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু একটি ফল। আপেলের
গুণের কথা বলে শেষ করার নয়। বাজারে সাধারণত দুই ধরনের আপেল বেশি দেখা যায়। লাল
এবং সবুজ রঙের। আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লাল আপেলটি পছন্দ করি কারণ এটি মিষ্টির
পরিমাণ বেশি। সারা বিশ্বে প্রায় ৭৫০০ এর বেশি প্রজাতি রয়েছে আপেলের এবং
প্রত্যেকটির ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতাগুলো জেনে নিন
লাল আপেল এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হলে এটিকে একটি আদর্শ বার্ধক্য বিরোধী ফল বলা
হয়। আর সবুজ ও হলুদ আপেলে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে কুয়ারসেটিন যা মানুষের মানসিক
স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। আপেলের সবটুকুই খাওয়া যায় তবে আপেলের বীজ
খাওয়াকে অনেকেই বিপদজনক মনে করেন। বাজারে যেসব আপেল আমরা পায় সেগুলো খেতে হয়
নরম এবং মুচমুচে।
এগুলো চাষ করা হয় টাটকা এবং কাঁচা খাওয়ার জন্য। আরও কিছু আপেল রয়েছে যেগুলো
শুধুমাত্র চাষ করা হয় রান্না করার জন্য অর্থাৎ এই আপেল দিয়ে সিডার তৈরি করা
হয়। সারা বিশ্বেই প্রায় আপেল চাষ হয় তবে চীন সবচেয়ে বেশি আপেল উৎপাদন করে।
আপেলের পুষ্টিগুণঃ
আপেলের সবচেয়ে বড় একটি পুষ্টিগুণ হচ্ছে আপেল আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে। নিয়মিত আপেল খেলে আমাদের অনেক রকম রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন সি,
ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই। ফলে এটি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কাজ করে। আপেল
নানা পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ একটি ফল।
প্রতি ১০০ গ্রাম আপেলে রয়েছে খাদ্য শক্তি ৫২ কিলো ক্যালরি, শর্করা ১৩.৮১ গ্রাম,
আমিষ ০.২৬ গ্রাম, ফাইবার ২.৪ গ্রাম, চর্বি ০.১৭ গ্রাম, ভিটামিন এ ৫৪ আই ইউ,
ভিটামিন ই ০.১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪.৬ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১০৭ মিলিগ্রাম,
সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম, কোলেস্টরেল ০ মিলিগ্রাম, লৌহ
০.১২ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ০.০৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাসাস ১১
মিলিগ্রাম।
আপেল খাওয়ার উপকারিতাঃ
ক্যান্সার প্রতিরোধকঃ আমাদের শরীরের জন্য আপেল ক্যান্সার প্রতিরোধক
হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত আপেল খেলে অগ্ন্যাশয় এর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ২৩%
কমে যায়। কারণ আপেলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফ্লাভোনল। আপেলের উপাদান
ট্রিটারপেনয়েডস লিভার, স্তন ও কলোনির মধ্যে ক্যান্সারের কোষ বাড়তে বাধা দেয়। এক
গবেষণায় জানা যায় আপেলের মধ্যে যে পরিমাণ ফাইবার থাকে তা মলাশয়ের ক্যান্সার
রোধে সাহায্য করে।
হার্ট ভালো রাখেঃ আপেলের ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট উপাদান সমূহ হার্টের
স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। আপেলে কোন কোলেস্টেরল নেই এবং আপেলের যে পরিমাণ
ফাইবার থাকে তা রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে হার্টের রক্ত চলাচল
স্বাভাবিক থাকে। হৃদযন্ত্রের কোন ক্ষতি হয় না এবং হার্ট ভালো থাকে।
ওজন কমাতে আপেলঃ যারা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন তাদের
জন্য আপেল একটি উত্তম খাবার। আপেলে উপস্থিত ফাইবার কোন ক্যালরি ছাড়াই পেট ভরাতে
সক্ষম যার ফলে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। যে সব পুরুষ ও মহিলা তাদের ওজন কমাতে চায়
তারা যেন তাদের দৈনিক ডায়েট চারটে একটি আপেল রাখে। এতে তার একটা ভালো রেজাল্ট
পাবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ আপেলে থাকে কুয়েরসেটিন নামক এক
ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে
এবং আমাদের শরীরকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিসের সমস্যা সমাধানেঃ আপেলে থাকে পেকটিন নামের একটি উপাদান।
আপেলের এ উপাদান ইনসুলেনের পরিমাণ ঠিক রেখে ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য
করে। তাছাড়া আপেলের মধ্যে যে ফাইবার থাকে তার রক্তের শর্করা পরিমাণ ঠিক রাখতে
সাহায্য করে।
ত্বক ভালো রাখেঃ নিয়মিত আপেল খেলে আমাদের ত্বক ভালো থাকে মুখের
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। একটা গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত প্রতিদিন আপেল খেলে
আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ আপিল আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
নিয়মিত আপেল খেলে আমাদের পাকস্থলীতে হজমের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়।
যার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়।
দাঁত ভালো রাখেঃ আপেল খাওয়া আমাদের দাঁতের জন্য বেশি উপকারী। যেমন
আপেলের রস আমাদের দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ফলে আমাদের দাঁত সুস্থ ও
সবল থাকে।
শ্বাসতন্ত্রের জন্য উপকারীঃ ধুমপান করা এবং দূষিত শহরে বসবাস করার
ফলে ফুসফুসের রোগ হওয়া সাধারণ ব্যাপার। গবেষণা অনুযায়ী আপেল ফুসফুসের জন্য অনেক
উপকারী। ২৫০০ জনের উপর গবেষণা করে জানা যায় যে আপেলে থাকা ভিটামিন সি এবং ই দুটি
ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আরেকটি গবেষণা থেকে জানা যায় যারা
ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন তারা যদি নিয়মিত আপেল খান তবে তাদের ফুসফুসের ক্রিয়া
পুনরুদ্ধার করে আপেল।
খালি পেটে আপেল খেলে কি হয়ঃ
আপেল আমাদের জন্য অনেক সুস্বাদু ও উপকারী একটি ফল। তবে অনেকেই মনে করেন আপেল খালি
পেটে খাওয়া ঠিক না। গ্যাসের সমস্যার জন্য অনেকেই এ কথা বলে থাকেন। তবে
বিশেষজ্ঞের মতে সকালেই ফল খাওয়া উচিত। তবে ফল খাওয়ার আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি
খেয়ে নিতে হবে। পুষ্টিবিদদের মতে সকালে ঘুম থেকে উঠে অল্প কিছু পানি খেয়ে তারপর
ফল খাওয়া যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কমলা খাওয়ার ৯টি উপকারিতা সম্বন্ধে জানুন
এর ফলে দরকার হবে না চা বা কফির। খালি পেটে শুধু আপেল ই নয় আরো খেতে পারেন
কমলালেবু পেঁপে, কলা ইত্যাদি। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে একটা আপেল খেতে পারেন এতে
আপনার শরীর খারাপ হবে না। রোজ সকাল খালি পেটে আপেল খাওয়ার ফলে আপেলে বিদ্যমান যে
ভিটামিন, আয়রন, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরে সহজেই মিশে যায়।
যার ফলে আমাদের সঠিক সারাদিন ই এনার্জিটিক থাকে। খালি পেটে আপেল খাওয়ার ফলে
আপেলের সমস্ত পুষ্টিগুণ আমাদের শরীর সহজে শুষে নিতে পারে। যার ফলে আমাদের শরীরের
পুষ্টির অভাব পূরণ হয় এবং আমাদের শরীর ভালো থাকে।
আপেল খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ
‘প্রতিদিন একটি আপেল আমাদের ডাক্তার থেকে দূরে রাখে’ এরকম একটি কথার প্রচলন আছে।
আপেলে যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি উপাদান আছে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে যখন তখন আপেল খেলেই যে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যাবে সেটা
ঠিক না। যে কোন ফল খাওয়ারই একটা নির্দিষ্ট সময় আছে এতে তা কার্যকরী ভূমিকা পালন
করতে পারে।
আপিল খাওয়ারও একটা নির্দিষ্ট সময় আছে যে সময় আপেল খেলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি
পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা যায় দিনে অন্তত একটি করে আপেল খেলে রক্তের ক্ষতিকর
এলডিএল কোলেস্টেরল কমে যায় এবং উপকারী কোলেস্টেরল এইচডিএল বেড়ে যায়। এটি
রক্তচাপ ও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। পুষ্টিবিজ্ঞানের রীতি অনুযায়ী আপেল
খাওয়ার উপযুক্ত সময় হল সকাল।
কারণ ফাইবারে ভরপুর আপেল খেলে তা সারাদিনের হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকবে বলেই
মত দেন পুষ্টিবিদগণ। আপেলের খোসা আঁশ ও পেকটিন সমৃদ্ধ। অনেকেরই অপর্যাপ্ত ঘুম
অথবা দেরিতে ঘুম ইত্যাদি জনিত কারণে হজম জনিত সমস্যা দেখা দেয় যার ফলে সকালে ঘুম
থেকে উঠে নির্দিষ্ট পানি খাওয়ার পরে একটা আপেল খাওয়া ভালো।
আপেল খাওয়ার অপকারিতাঃ
আপেল বেশ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও স্বাদ যুক্ত একটি ফল। আপেল খাওয়ার উপকারিতা অনেক
থাকলেও এর অল্প কিছু অপকারিতা ও আছে। আপেল খাওয়ার অপকারিতা হলো যাদের
অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে তাদের কে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত। যদিও
আপেলে এলার্জি থাকা বিষয়টা অনেক দুর্লভ তারপরও সতর্ক থাকা ভালো।
এলার্জিজনিত সমস্যা হলে সাধারণত কোথাও ফুলে ওঠে, চুলকানি হয় বা জীভ চুলকানো
ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারো কারো আবার গ্যাসের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
কেউ যদি ফাইবার জাতীয় খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত না থাকে তবে সে গ্যাসের সমস্যায়
ভুগতে পারে।
লেখক এর মন্তব্যঃ
লাল আপেল হউক কিংবা সবুজ যে কোন আপেল আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। লালা
পেলে থাকে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট আর যারা রক্তের শর্করার পরিমাণ কমাতে
চান তারা খেতে পারেন সবুজ আপেল। দুই ধরনের আপেল খাওয়ায় আমাদের শরীরের জন্য অনেক
উপকারী।
কিন্তু দরকারি বিষয় হচ্ছে যে আমাদের আপেল নিয়মিত খাওয়া উচিত। আপিল খাওয়ার
সঠিক সময় সকাল। আমরা যদি সঠিক নিয়মে এবং সঠিক সময়ে আপেল না খায় তবে এর সঠিক
পুষ্টিগুণ আমরা পাব না।
প্রিয় পাঠক, এখানে আমরা আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তার আলোচনা
করেছি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই পোস্টটি পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে
দেবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url