কমলার পুষ্টিগুন ও খাওয়ার উপকারিতা সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হল

বেদানা আমাদের শরীরে কি কি উপকার করেআমরা অনেকেই জানি কমলালেবু একটি সুস্বাদু ফল এবং ভিটামিন সি তে ভরপুর। কিন্তু কমলার পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। কমলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ভিটামিন সি এর অন্যতম উৎস হিসেবে কমলালেবু আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

কমলা খাওয়ার উপকারিতা
এই পোস্টে আমরা আরো আলোচনা করেছি কমলার পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম। তাই এ বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকাঃ


কমলালেবু আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও সুস্বাদু একটি ফল। কমলালেবু কে ভিটামিন ‘সি’ এর ভান্ডার বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ এর প্রয়োজন হয় তার সবটুকুই আছে একটা কমলায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এই ফলটার বিশেষ কদর রয়েছে।
এই ভিটামিন ‘সি’ ক্যান্সার প্রতিরোধক এবং স্বাস্থ্যকর রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। আমাদের প্রতিদিনের ডায়েট লিস্টে কমপক্ষে একটি কমলা রাখা উচিত। কমলালেবুর কিছু বিশেষ গুণ আছে যা আমাদের শরীরকে তরতাজা রাখতে সাহায্য করে। ছোট বড় সবাই কমলা খেতে পারে এবং সবার স্বাস্থ্যের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী।

কমলার পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সবারই জানা উচিত। আমাদের দেশে সাধারণত সারা বছরই কমলা পাওয়া যায় কিন্তু শীতকালে কমলা একটু সহজলভ্য হয়ে থাকে। সুতরাং আমরা যদি আমাদের খাবার তালিকায় প্রতিদিন একটি কমলা রাখতে পারি তবে আমাদের সুস্থ থাকা সহজ হবে।

কমলার পুষ্টিগুণঃ


কমলা আমাদের দেশে সুপরিচিত একটি ফল। প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায় কমলা। কমলার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাই আসুন জেনে নেয়া যাক একটি কমলায় কি কি রকম ভিটামিন আছে। ১০০ গ্রাম পরিমাণের একটি কমলায় আছে ভিটামিন বি ০.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ‘সি’ ৪৯ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩০০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৩ মিলিগ্রাম। দৈনিক প্রয়োজনের সবটুকু ভিটামিন ‘সি’ একটি কমলা থেকে পাওয়া যায়।

কমলা খাওয়ার উপকারিতাঃ


রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ বিভিন্ন সময় আমাদের শরীরের নানা রকম রোগের আক্রমণ হতে পারে, নানা রকম ভাইরাসের আক্রমণ হতে পারে কিন্তু আমাদের শরীরে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে তবে এই রোগবালা থেকে আমাদের শরীর রক্ষা পায়। কমলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফলিক এসিড, ফাইবার, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি। কমলার এসব পুষ্টি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই আমরা কমলার পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা অস্বীকার করতে পারিনা।

ক্যান্সার প্রতিরোধকঃ প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন থাকার পাশাপাশি আরো রয়েছে আলফা ও বেটা ক্যারোটিনের মত ফ্লাভনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ অন্যান্য এন্টি অক্সিডেন্ট যৌগ যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

শর্করা নিয়ন্ত্রণ করেঃ কমলার খোসায় চিনির পরিমাণ খুবই কম যার ফলে এটা রক্তের শর্করার মাত্রায় প্রভাব ফেলে। ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক সিনড্রোম রোগীদের সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই কমলার পুষ্টিগুণ ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বেশ উপকারী।

হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে কমলাঃ হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখার জন্য আমাদেরকে যত্নশীল হতে হবে। প্রতিদিন আমাদের খাবার তালিকায় কমলা রাখতে হবে। কারণ কমলা খেলে তা আমাদের হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে। যাদের হার্টের রোগ রয়েছে তাদের জন্য কমলা বেশ উপকারী একটি ফল। তাই হার্টের গুরুতর সমস্যা থেকে বাঁচতে আমাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকা একটি কমলা রাখা উচিত।

ত্বক ভালো রাখেঃ কমলা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী একটি ফল। নিয়মিত কমলা খেলে তা আমাদের ত্বককে ভেতর থেকে ভালো রাখতে কাজ করে। সেইসঙ্গে ত্বকের ছোপ ছোপ দাগ দূর করে উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। ত্বক কেবল আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্যই নয় এটা আমাদের সুস্থতারও প্রকাশ করে।

মস্তিষ্ক ভালো রাখেঃ আমাদের মস্তিষ্ক সুস্থ ও ভালো রাখতে কমলায় থাকা উপাদান গুলো কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কমলা নিয়মিত খেলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কমলায় থাকে ফ্লেভনয়েডস যা ব্রেইন ফাংশন ঠিক রাখার পাশাপাশি মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ছোট বড় সবারই কমলা খাওয়া উচিত।

চোখ ভালো রাখেঃ আমরা অনেকেই জানি কমলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। এ ভিটামিন চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। চোখের ক্ষমতা বাড়াতে কমলায় বিদ্যমান ভিটামিন গুলো খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। সুতরাং নিয়মিত কমলা খেলে আমরা আমাদের চোখের সমস্যা সহজে দূর করতে পারবো। চোখের জন্য ভিটামিন এ এর দরকার হয় আর কমলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ।

ওজন কমাতেঃ কমলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং এটিকে ক্যালোরি ফ্রি ফল বলা হয়। তাই নিয়মিত কমলা খাওয়ার ফলে কমলার পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে সাহায্য করে।

চুলের যত্নেঃ চুলের যত্নে ভিটামিন সি যথেষ্ট উপকারী। চুলের বৃদ্ধি ধরে রাখতে ভিটামিন সি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আর যেহেতু কমলা লেবুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সুতরাং বোঝা যায় চুলের যত্নে কমলালেবু কতটা উপকারী।

কমলা খাওয়ার অপকারিতাঃ


শীতকালের মৌসুমী ফল হিসেবে কমলা রয়েছে প্রথম সারিতে। এই ফল স্বাদ এবং পুষ্টিগুণের বিচারে রয়েছে প্রথম দিকে। কমলা খাওয়ার তেমন কোন অপকারিতা নেই তবে বেশি পরিমাণে খেলে বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কেউ যদি প্রতিদিন ৪/৫ টা কমলা খাওয়া শুরু করে তবে সে অতিরিক্ত পরিমাণ ফাইবার গ্রহণ করছে। এর ফলে পেটে ব্যথা, পেতে খিচুনি, ডায়রিয়া.পেট ফুলে যাওয়া এবং বমি বমি ভাব দেখা যেতে পারে।
অপরদিকে ভিটামিন সি বেশি পরিমাণে গ্রহণ করার ফলে বুক জ্বালা, বমি বমি ভাব, অনিদ্রা হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। কমলা হল প্রাকৃতিকভাবে অ্যাসিডিক একটি ফল। যা অধিক পরিমাণ খেলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে তারা কমলা খাওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিদিন ১/২ টি কমলা খেতে পারেন।

কমলা খাওয়ার নিয়মঃ


স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বিচারে কমলা খুবই উপকারী আমাদের জন্য। কমলার পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে আমাদের কমলা খাওয়া ‍উচিত। ছোট বড় সবাই কমলা খেতে পারে এর উপাদান যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তেমনি আমাদের ত্বক ভালো রেখে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। তবে সবসময়ই ফল খাওয়া ঠিক নয়। এর ফলে হজমে সমস্যা হতে পারে এসিডিটি বাড়তে পারে। একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফল খাওয়া ভালো।
একজন সুস্থ ব্যক্তি দিনের যেকোনো সময় ফল খেতে পারেন তার জন্য কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ফল খাওয়ার বিষয়টি আসলে নির্ভর করে শরীরের অবস্থার ওপর। অনেকের রাতে ফল খেলে হজমে সমস্যা হয়। কমলা লেবু সকালে বা রাতে খাওয়া একেবারে উচিত হবে না। কমলা খাওয়ার একটি ভালো সময় হলো সকাল এবং দুপুরের মাঝামাঝি অর্থাৎ মধ্য দুপুর। খাবার একঘন্টা আগে অথবা এক ঘন্টা পরে কমলা খাওয়া যেতে পারে।

লেখকের মন্তব্যঃ


ভিটামিন সি-এর ভান্ডার কমলালেবু। ছোট বড় সবারই পছন্দের তালিকায় থাকে এই ফল। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কমলাতে বিদ্যমান ভিটামিন উপাদান গুলো আমাদের শরীরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকার করে। তাই কমলালেবু আমাদের সবাইকে সঠিক নিয়মে সঠিক সময়ে খাওয়া উচিত।

সময় অনুযায়ী কমলা না খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমন অনেকের ক্ষেত্রে রাতে কমলা খেলে গ্যাসের সমস্যায় ভুগেন। আমাদের উপকার পেতে অবশ্যই সঠিক সময়ে কমলা খাওয়া উচিত।

প্রিয় পাঠক, কমলার পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কিত এ আলোচনা যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই এই পোস্টটি পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url