গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ওজন কমাতে শসার কি কি অবদান রয়েছেগাজর হল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। অনেকেই আমরা গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্বন্ধে অবগত নয়। গাজরে বিদ্যমান পুষ্টিগুণ ও ভিটামিনসমূহ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। দৈনন্দিন জীবনেের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক ভিটামিন গাজরে পাওয়া যায়।

গাজর খাওয়ার উপকারিতা
এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আরো আলোচনা করেছি গাজরের পুষ্টিগুণ, গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সুতরাং পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকাঃ


বর্তমান সময়ের একটি জনপ্রিয় সবজি হলো গাজর। গাজর সাধারণত কমলা রঙের হয়ে থাকে। এটি একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সবজি। গাজর শীতকালীন সবজি এবং সারাবছর সচরাচর খুব একটা পাওয়া যায় না। গাজর অনেকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে থাকেন আবার কেউ সালাদ করে খেতে পছন্দ করেন। অনেকের আবার গাজরের হালুয়া অনেক পছন্দ। পোলাও খিচুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে রান্না করে গাজর খাওয়া যায়। গাজর হালকা মিষ্টি স্বাদের হয়।
গাজর নানারকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে। গাজর খাওয়া লিভারের জন্য ভালো। এই সময়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে গাজরের মত পুষ্টিকর সবজি প্রয়োজন। গাজরে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, কপার ও ম্যাঙ্গানিজ আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গাজরের পুষ্টিগুণঃ


গাজরে রয়েছে ৪১ গ্রাম ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট ৯.৮ গ্রাম, প্রোটিন ০.৯ গ্রাম, ফ্যাট ০.২ গ্রাম, ফাইবার ২.৮ গ্রাম, পটাশিয়াম ১৬৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম২২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৬ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৩ মিলিগ্রাম এবং জিংক রয়েছে ০.২ মিলিগ্রাম।

গাজর খাওয়ার উপকারিতাঃ


রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ রয়েছে ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত গাজর খেলে শরীরে জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য প্রতিরক্ষামূলক ঢাল তৈরি হয়।

লিভারের সমস্যা সমাধানেঃ গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম থাকায় লিভারের সমস্যার সমাধান করতে পারে। গাজরে আরো আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য বা মলত্যাগের উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। এর ফলে টয়লেট ক্লিয়ার হয় এবং লিভার কোলনকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। কেউ যদি প্রতিদিন নিয়ম করে গাজর খেতে পারে তাহলে তার লিভারের সংক্রমণ কমে যায়। গাজর নিয়মিত খেলে পিত্তথলির ফ্যাট কমে যায়।

তারুণ্য ধরে রাখেঃ গাজর এন্টি এজিং হিসেবে বহুল পরিচিত একটি সবজি। অনেক রূপ বিশেষজ্ঞদের মতে গাজর ত্বকের বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। গাজর নিয়মিত খেলে আমাদের ত্বকে পুষ্টি যোগায়। গাজরে থাকা মেটাবলিজম শরীরের ক্ষয়প্রাপ্ত সেলগুলোকে ক্ষয় হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে ফলে ত্বক সুন্দর থাকে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে গাজরঃ গাজর নিয়ে বেশ কিছু গবেষণায় জানা যায় গাজরের মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার উপাদান আছে। নিয়মিত গাজর খেলে ফুসফুস ক্যান্সার, কলোরেক্টাল ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। আমরা যখন কোন খাবার খাই তখন তা হজমের পরও কিছু উচ্ছিষ্ট অংশ শরীরে থেকে যায়। এই উচ্ছিষ্ট অংশ গুলোকে ফ্রি ‍র‌্যাডিক্যাল বলা হয়।

ফ্রি রেডিক্যাল গুলো শরীরের কোষ কে ধ্বংস করে বা ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার ফলে শরীরে ক্যান্সার প্রবেশ করে। কিন্তু প্রতিনিয়ত গাজর খাওয়া হলে গাজরের ভিতরে থাকা উপাদান এই ফ্রি রেডিক্যাল গুলো নষ্ট করে দেয়। এভাবে গাজর ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

চোখের সমস্যায় গাজরঃ আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য প্রয়োজন হয় ভিটামিন এ এর। ভিটামিন এর অভাব হলে আমাদের দৃষ্টি শক্তি দুর্বল হয়। গাজরে যেহেতু রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ তাই আমাদের চোখের সমস্যা সমাধানে গাজর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন এ এর অভাব পূরণে আমাদের প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি গাজর খাওয়া উচিত।

যৌন শক্তি বৃদ্ধি করেঃ যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে গাজর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন যদি দুই থেকে তিনটি করে গাজর খাওয়া যায় তবে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পাবে সাথে শুক্রাণু সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে।

হজমের সমস্যা সমাধানেঃ কাঁচা গাজর খেলে হজম সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হয় না। যারা দিনে দুই থেকে তিনটি গাজর খান তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূরীভূত হবে। ফলে পাইলসের রোগীরাও অনেক উপকার পাবেন।

জন্ডিস প্রতিরোধ করেঃ কোন জন্ডিস রোগী যদি গাজরের রস, কাঁচা গাজর অথবা গাজর সেদ্ধ খায় তবে সে রোগী আরাম পাবে এবং রোগ দ্রুত সেরে যাবে।

রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ গাজরে থাকে অতিরিক্ত পরিমাণ আয়রন যার রক্তের ক্ষয় দ্রুত দূর করে। কেউ যদি প্রতিদিন দুই থেকে তিন গ্লাস গাজরের রস খেয়ে থাকে তাহলে তার রক্ত পরিষ্কার থাকে।

হাড় মজবুত করেঃ গাজরে রয়েছে পর্যন্ত পরিমাণ ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম যা হাড় মজবুত করার জন্য খুব প্রয়োজন। সুতরাং এই উপকার পেতে আমরা প্রতিনিয়ত গাজর খেতে পারি।

হার্টকে শক্তিশালী করেঃ দিনে দুই থেকে তিনটি কাঁচা গাজর চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা গাজরের জুস করে খেতে পারেন। এটা আপনার হাটকে আরো শক্তিশালী করবে।

দাঁতের সুরক্ষায় গাজরঃ দাঁতের সুরক্ষায় গাজর বেশ উপকারী। গাজর যখন চিবিয়ে খাওয়া হয় তখন এটি প্রাকৃতিক টুথব্রাশ হিসেবে কাজ করে। গাজরে থাকা প্লাক ফাইটিং কেরাটিন এবং ভিটামিন এ বেশি থাকে যা দাঁতের সূক্ষ্ম এনামেলকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

ত্বকের যত্নে গাজরঃ ত্বকের যত্নে গাজর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাজরে থাকা বিটা ক্যারোটিন যা গাজরকে কমলা রঙ দেয় তা আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করবে। মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত পরিমাণে গাজর খাওয়া যাবেনা। গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ যা ত্বক সংক্রান্ত যাবতীয় রোগ নিরাময় করতে পারে। প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫০ গ্রাম গাজরের রস খেলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।

সূর্য থেকে ত্বককে রক্ষা করেঃ গাজর আমাদের শরীরের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে। গাজরে থাকা বিটা ক্যারোটিন একটি ত্বক বান্ধব পুষ্টি উপাদান যা শরীরের অভ্যন্তরে ভিটামিন এতে রূপান্তরিত হয়। এটি ত্বকের টিস্যু মেরামত করে এবং ক্ষতিকর বিকিরণ থেকে ত্বক কে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

ত্বকের তৈলাক্ততা হ্রাস করেঃ যাদের ত্বকের তৈলাক্ততা বেশি বা তৈলাক্ত ত্বকে ভুগছেন তারা নিয়মিত গাজর খেতে পারেন। নিয়মিত গাজর খেলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে।

গাজর খাওয়ার উপযুক্ত সময়ঃ


গাজর আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। আমাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিনিয়ত গাজর রাখা উচিত। কখন কোন সময়ে গাজর খাওয়া সবচেয়ে ভালো এ নিয়ে অনেকেই দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কাঁচা গাজর চিবিয়ে খেলে সবচেয়ে বেশি পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। অথবা গাজরের সালাদ বা গাজরের জুস করে খেলেও সর্বোচ্চ পরিমাণ পুষ্টি পাওয়া যেতে পারে।
তবে যে সময়টাই গাজর খেলে সবচেয়ে বেশি পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় সেটা হচ্ছে সকাল। প্রতিদিন সকালে আপনি এক গ্লাস গাজরের জুস খেতে পারেন তাতে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে কয়েক গুণ। চিকিৎসকরা শরীরে পুষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে খাওয়ার আগে অথবা খাওয়ার পরে এক গ্লাস গাজরের জুস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গাজর এবং অন্যান্য রঙিন সবজিতে বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায় যা শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে।

গাজর খাওয়ার নিয়মঃ


আমাদের মনে এই প্রশ্ন আসতেই পারে যে কি নিয়মে গাজর খেলে সঠিক পুষ্টি উপাদান পাব। গাজর আমরা সবাই খাই কিন্তু কোন নিয়ম না মেনেই খায় না জেনে খায়। প্রথমত আপনি গাজর কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন। গাজরের জুস বানিয়ে খেতে পারেন। আবার আপনি গাজরের সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন। গাজর রান্না করেও খাওয়া যায়।

গাজর রান্না করার জন্য মাঝারি আছে নরম না হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। বিটা ক্যারোটিন চর্বিতে দ্রবণীয় উচ্চ তাপেও নষ্ট হয় না। গাজর রান্না করা হলে নরম হয় যা সহজে হজম হয় এবং গ্রহণ সহজ হয়।

গাজর খাওয়ার অপকারিতাঃ


গাজর যেমন সুস্বাদু তেমনি একটি ভালো স্বাস্থ্যবর্ধক সবজি। গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে কিছু। গাজর খাওয়ার অপকারিতা হলো তার অত্যাধিক পরিমাণে খাওয়া যাবেনা। অত্যাধিক গাজর খেলে বেশ কিছু অসুবিধা সম্মুখীন হতে পারেন। গাজর হল বিটা ক্যারোটিনের একটি খুব ভালো উৎস যা শরীরের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে। কিন্তু অত্যধিক পরিমাণে গাজর খেলে তা আপনার শরীরকে বিবর্ণ করে দিতে পারে।
গাজরে চিনির পরিমান বেশি তাই যারা ডায়বেটিস এ ভুগছেন তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে পারেন। গাজর বেশি খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও ডায়রিয়া ‍ও পেটে ব্যাথা হতে পারে। যেসব মহিলারা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তারা বেশি পরিমাণে গাজর খেলে দুধের স্বাদ পরিবর্তন হতে পারে।

লেখকের মন্তব্যঃ


গাজরে থাকা পুষ্টি উপাদানই গাজরকে অন্য সবজি থেকে আলাদা করেছে। গাজর যেমন সুস্বাদু তেমন উপকারি একটা সবজি। নিয়মিত গাজর খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গাজর এমন একটা সবজি যা আমাদের ভিটামিনের অভাব পূরণ করে এবং আমাদের ত্বকে ব্যবহার করা হয়।

প্রিয় পাঠক, গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্বন্ধে আমাদের এই আলোচনা যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url