চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা জানুনপুষ্টিকর খাবার হিসেবে চিয়া সিডের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। পুষ্টিবিদরা চিয়া
সিডকে সুপারফুড বলেন। কিন্তু আমরা অনেকেই চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সম্পর্কে অবগত না। নিয়মিত চিয়া সিড খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি পায় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে।
এ পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আরো আলোচনা করেছি চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
খাবার সময় ও নিয়ম সম্পর্কে সুতরাং পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকাঃ
চিয়া সিড খুবই পুষ্টিকর খাবার। বর্তমান সময়ে আমরা অনেকেই নিজেদের স্বাস্থ্য
নিয়ে সচেতন থাকি। প্রতিদিনের খাবারে কি কি পুষ্টিগুণ আছে এবং কি কি খাবারে কি কি
ভিটামিন ও পুষ্টি পাওয়া যায় তা নিয়ে আমরা সচেতন থাকি। চিয়া সিড খাওয়ার
উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা উচিত।
আরো পড়ুনঃ
নিয়মিত বেদানা খেলে কি হয়
মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর মরুভূমি অঞ্চলে চিয়া নামে এক ধরনের গাছ জন্মায়। সাদা,
কালো ও বাদামী রঙের চিয়া সিড গুলো অনেকটা ছোট ছোট তিলের দানার মত। পানিতে
ভিজিয়ে রাখলে চিয়া সিড ১২ গুন পর্যন্ত বড় হতে পারে। এটি সাধারণত শস্যের
তালিকায় পড়লেও একে এক ধরনের ভেষজ বলা হয়। প্রাচীন অ্যাজটেক জাতির প্রধান খাদ্য
তালিকা এটি অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করে। ক্ষুধা মিটানোর পাশাপাশি
চিয়া সিড রূপচর্চায় ব্যবহার করা হতো।
চিয়া সিড এর পুষ্টিগুনঃ
পুষ্টিকর খাবার গুলোর মধ্যে চিয়া সিড অন্যতম। যদিও বীজ জাতীয় যেকোনো খাবারের
স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কিন্তু চিয়া সিডে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি
অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, ও ক্যাফিক এসিড নামক
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয়
ও অভ্রবণীয় খাদ্য আঁশ। পুষ্টিকর এই খাবারটি সপ্তাহে সাত দিনই খাওয়া যায় কিন্তু
সপ্তাহে তিন চার দিন খেলো শরীরে উপকার পাওয়া যায়।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়মঃ
চিয়া সিডের স্বাদ এবং গন্ধ নেই। চিয়া সিড খাওয়ার জন্য রান্না করার প্রয়োজন
পড়ে না। চাইলে পানিতে ভিজিয়ে রেখে খাওয়া যায়। আবার আপনি চাইলে জুস, পুডিং,
ওটস ও সুজি ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। আবার কেউ চাইলে টক দইয়ের সঙ্গে
মিশিয়ে অথবা রান্না করার সবজি সালাদের উপর ছড়িয়েও খেতে পারেন। চিয়া সীড কুসুম
গরম পানিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমাতে
যাওয়ার আগে খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ নিয়মিত গাজর খাওয়ার উপকারিতা
আপনি চাইলে দুই কাপ নারকেলের পানির সঙ্গে পছন্দের যে কোন ফলের রস মিশিয়ে সাথে
দুই থেকে তিন টেবিল চামচ চিয়া সীড মিশিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে নিন। সাথে কিছু পানি
যোগ করতে পারেন। প্রায় আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পর খেয়ে নিতে পারেন। প্রচুর
পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই খাদ্যটি এভাবে বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়।
চিয়া সিড খাওয়ার সময়ঃ
আমরা যারা স্বাস্থ্য সচেতন আছি তারা খুব অনায়াসে চিয়া সিড খেতে পারি। তবে ভালো
ফলাফল পেতে অবশ্যই চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম এবং সময় মেনে খাওয়া উচিত। চিয়া সিড
খাবার আগে আধা ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ভালো ফল মেলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে দ্রুত ফলাফল পেতে সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে
একগ্লাস পানির সঙ্গে দুই চামচ চিয়া সিড মিশিয়ে খেতে পারেন। চিয়া সীড এর যেহেতু
কোন স্বাদ নেই তাই স্বাদ বৃদ্ধির জন্য লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন।
ওজন কমাতে চিয়া সিডঃ
চিয়া সিড কে সুপার ফুড বলা হয়। চিয়া সিড ওজন কমাতে খুবই কার্যকরী। তাইতো
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বাস্থ্য প্রেমীদের মধ্যে চিয়া সিড খাওয়ার প্রবণতা
বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান তাদের কাছে চিয়া সিড খুবই
জনপ্রিয়। চিয়া সিড আমাদের ওজন কমাতে কিভাবে সাহায্য করে তা আমাদের জানা দরকার।
চিয়া সিডে উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও খাদ্য আশ রয়েছে যা ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে
এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে যার ফলে ঘন ঘন ক্ষুধা লাগে না।
প্রতি আউন্স চিয়া সিডে ৯.৭৫ গ্রাম খাদ্য আশ ও ৪.৬৯ গ্রাম প্রোটিন থাকে। যেখানে
খাদ্য শক্তি রয়েছে ১৩৮ ক্যালরি। ওজন কমানোর সহায়ক খাদ্য হিসেবে চিয়া সিড এর
জনপ্রিয়তা বাড়লেও নিশ্চিত করে বলার মত গবেষণা এখনো হয়নি। তবে বেশ কিছু
গবেষণায় দেখা গেছে যে চিয়া সিডের পাশাপাশি কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেলে ওজন
কিছুটা কমে।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতাঃ
- চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে আরো শক্তিশালী করে তোলে।
- ওমেগা ৩ হৃদরোগের ঝুঁকি এবং রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- মুরগির ডিমের চেয়েও ৩ গুণ বেশি পরিমাণ উচ্চমাত্রার প্রোটিন আছে চিয়া সিডে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং উপকারী।
- দুধের চেয়েও পাঁচ গুণ পরিমাণ বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় চিয়া সিডে। যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং মজবুত ও শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে।
- গবেষকদের মতে চিয়া সিডে সালমন মাছের চেয়ে আট গুণ বেশি ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে।
- চিয়া সিড ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখে যা ডায়বেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
- আমাদের শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। গ্যাসের সমস্যা কমাতে, এবং ভালো ঘুমের জন্য চিয়া সিড অনেক উপকারী।
- চিয়া সিড হাঁটু ও জয়েন্ট এর ব্যথা কমায়। শুধু তাই নয় ত্বক চুল ও নখ সুন্দর রাখে।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতাঃ
প্রতিটি খাবারেরই উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা ও থাকে। আমরা শুধু যদি
উপকারিতা নিতে চাই তবে সঠিকভাবে নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত।
- কয়েকজন বিজ্ঞানীর চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে যে চিয়া সিদ ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারকে বাইরে তুলতে পারে। সুতরাং এটি পরিমিত পরিমানে ব্যবহার করা উচিত।
- চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে তাই এটি বেশি পরিমাণ খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। তাই এটি অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। আর যদি কোন রূপ স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয় তবে এটা খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
- অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে।
- চিয়া সিড শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ কমায়। তাই বেশি পরিমাণে চিয়া সিড খেলে রক্তচাপ বেশি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
লেখক এর মন্তব্যঃ
প্রাচীনকাল থেকেই চিয়া সিডের প্রচলন ছিল এরকম প্রমাণ পাওয়া যায়। ক্ষুধা
মেটানোর পাশাপাশি রূপচর্চার কাজেও ব্যবহার করা হতো চিয়া সিড। বর্তমানে বেশ
জনপ্রিয় এই কারণে যে এটি খেলে খুব দ্রুত অতিরিক্ত ওজন কমানো যায়। চিয়া সিড
খাওয়ার নিয়ম ও খুব সহজ। যেহেতু এর নিজস্ব কোন স্বাদ এবং গন্ধ নেই তাই যে কোন
খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে আমরা চিয়া সিড খেতে পারি।
চিয়া সিড পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে খাওয়া যায় আবার এর স্বাদ বৃদ্ধির জন্য
অল্প লেবুর রস মিশিয়ে নেয়া যেতে পারে। তবে ভালো ফলাফল পেতে হলে অবশ্যই আমাদের
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম কোন সময় খেতে হবে এবং কি পরিমান খেতে হবে এটা জানা
অত্যন্ত জরুরী। দ্রুত উপকারের আশায় যদি আমরা বেশি খেয়ে ফেলি তাহলে আমরা ক্ষতির
সম্মুখীন হতে পারি। তাই সঠিক ফলাফল পেতে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সম্পর্কে জেনেই খাওয়া উচিত।
প্রিয় পাঠক, এ পোস্টে আমরা চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে
আলোচনা করেছি। কি নিয়মে এবং কি পরিমান খেতে হবে তা বলা হয়েছে। সুতরাং আপনারা
যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে পোস্টটি পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url