বেদানার পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

আপেল খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানুনবেদানা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু বেদানার পুষ্টিগণ ও খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। বেদানায় বিদ্যমান ভিটামিনসমূহ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করে।

বেদানা খাওয়ার উপকারিতা
এই পোস্টে আমরা আরো আলোচনা করেছি বেদানার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে, বেদানা খাওয়ার উপকারিতা, ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। সুতরাং পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকাঃ


বেদানা আমাদের সবার কাছে পাই পরিচিত একটি ফল এবং যথেষ্ট জনপ্রিয়। পুষ্টিগুণ বিচারেও বেদানা প্রথম সারির একটি ফল। বেদানার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী গুনাগুন। প্রতিনিয়ত নিয়ম করে ডালিম খেলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বেদানা অনেকের পছন্দের তালিকায় থাকার পরও দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই খেতে পারেন না।
কিন্তু এর রয়েছে বিস্তর পুষ্টিগুণ। বেদানার পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শরীর বাঁচাতে বেদানোর রসের কোন বিকল্প হতে পারে না। বেদানায় উপস্থিত ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ও নানাবিধ শক্তিশালী উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।

যার ফলে ছোট খাটো কোন রোগ আমাদের ধারে কাছে ঘেষতে পারে না। বেদানা আয়ুর্বেদিক এবং ইউনানী চিকিৎসার পথ্য ব্যবহৃত হয়। শুধু ফল নয় বেদানার খোসা শিকড়, ছাল, ফুল সবকিছুই রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।

বেদানার পুষ্টিগুণঃ


বেদানা একটি অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও জনপ্রিয় ফল। আমাদের দৈনন্দিন চাহিদার ৩০ শতাংশ ভিটামিন সি, ৩৬ শতাংশ ভিটামিন কে, ১৬ শতাংশ ভিটামিন বি ৯ ও ১২% পটাশিয়াম পাওয়া যায় মাত্র এক কাপ ডালিমের দানায়। বেদানায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস।
প্রতি ১০০ গ্রাম বেদানায় রয়েছে ৭৮ ভাগ পানি, ০.১ স্নেহ, ১.৫ ভাগ আমিষ, ৫.১ ভাগ আশ, ১৪.৫ ভাগ শর্করা, ০.৭ ভাগ খনিজ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৪ মিলিগ্রাম অক্সালিক এসিড, ১২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ০.৩ মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন, ০.৩ মিলিগ্রাম নিয়াসিন ও ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ইত্যাদি।

বেদানা খাওয়ার উপকারিতাঃ


রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ প্রতিদিন বেদানা খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বেদনায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তো শরীরের উপকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেদানার মধ্যে থাকা উপাদান অ্যান্থোসিয়াসিন যা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখে দেয় এবং দেহের কোষ কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

এছাড়াও বুকের ব্যথা, বুক ধরফরানি, কাশি, জন্ডিস ও কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করতেও এর ভূমিকা রয়েছে। পেটের পুরাতন অসুখ ও জ্বর সারাতেও এর জুড়ি নেই।

হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখেঃ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক আতঙ্কের রোগ হল হৃদরোগ। আগে বেশিরভাগ বয়স্ক মানুষের হৃদরোগ হতো কিন্তু বর্তমানে সব বয়সী মানুষের মাঝেই হৃদরোগ দেখা যায়। প্রতিদিন বিভিন্ন রকম তেল চর্বি যুক্ত খাবার গ্রহণ করার ফলে আমাদের ধমনীর আবরণে চর্বি জাতীয় পদার্থ জমে আস্তে আস্তে তা সংকুচিত হয়ে থাকে।

বেদানার রস মাংসপেশিতে দ্রুত অক্সিজেন পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। নিয়মিত বেদানার রস খেলে ধমনীতে জমে থাকা চর্বি স্তরকে গলিয়ে পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। বেদানায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং আমরা যদি প্রতিদিন একটি করে বেদানা খেতে পারে তবে আমরা হৃদরোগের হাজারো সমস্যা থেকে মুক্তি পাব।

ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতেঃ ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে বেদানা অনেক উপকারি একটি ফল। বেদানা পোমেগ্র্যানেট অয়েল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ভালো কাজ করে এবং ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণকে প্রতিরোধ করে। এছাড়াও বেদানায় থাকা ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, সাইট্রিক এসিড ও ট্যানিন ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উপকারী।

রক্তশূন্যতা দূর করেঃ রক্তশূন্যতা দূর করতে বেদানা অনেক কার্যকরী ফল। বেদানাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন যার রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। রুচি বৃদ্ধি করতেও বেদানার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে নিয়মিত বেদানা রস খেলে ব্লাড ভেসেলে সৃষ্টি হওয়া প্রদাহ কমতে শুরু করে। সারা শরীরে রক্তের প্রবাহ এতোটা বেড়ে যায় যে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। সুতরাং যাদের ব্লাড প্রেসার এর সমস্যা আছে তারা নিয়মিত ভাবেই বেদানা খেতে পারেন।

জয়েন্টের সচলতা বৃদ্ধিঃ জয়েন্টের সচলতা বৃদ্ধিতেও বেদনার কার্যকরের ভূমিকা বিদ্যমান। আমাদের শরীরে যখন ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমতে শুরু করে তখন এমন কিছু ক্ষতিকর এনজাইমের ক্ষরণের ফলে জয়েন্টের সচলতা কমতে শুরু করে। ফলে আমাদের চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। আমরা জয়েন্টে ব্যথা অনুভব করি।

এই ক্ষেত্রেও বেদানা নানাভাবে কাজে আসে। যে এনজাইমের কারণে হাড়ের ক্ষয় হয়ে থাকে তার ক্ষরণ কমিয়ে দিয়ে বিভিন্ন রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমাতে এই ফলটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

দাঁতের ক্যাভিটির সমস্যা সমাধানঃ বেদানা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিভাইরাল প্রপাটিজে পরিপূর্ণ হওয়ায় এ ফলটি খাওয়া মাত্র মুখের ভেতরের ক্ষতিকর জীবাণু সব মারা যায়। ফলে তাদের ক্যাভিটির সমস্যা হওয়ার আশার কারণে কমে যায়।

ডায়াবেটিস দূরে থাকেঃ পারিবারিকভাবে যাদের ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার ইতিহাস আছে তারা খুব শীঘ্রই বেদনা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন ডায়াবেটিস আপনার শরীরে কখনোই বাসা বাঁধতে পারবে না। বেদানা খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করবে যে রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার কোন সম্ভাবনাই থাকবে না।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ ফ্লেবোনয়েড নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে বেদানায় যা রক্তে উপস্থিত ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টক্সিক উপাদানদের শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে কোনভাবেই আমাদের শরীরে ক্যান্সারের সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা থাকে না। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে প্রোস্টেট এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারকে দূর করতেও এই ফলটি নানাভাবে সাহায্য করে।

চুল পড়া কমাতে সাহায্য করেঃ যারা অতিরিক্ত চুল পড়া নিয়ে এত চিন্তায় আছেন তারা প্রতিদিন বেদনার রস খেতে পারেন। এতে আপনার চুল পড়া কমে যাবে এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।

ভিটামিনের ঘাটতি দূর করেঃ আমাদের প্রতিদিনের জীবনে শরীরকে সুস্থ ও সচল রাখতে অনেকগুলো ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। এইসব ভিটামিনের প্রায় সবকটির দেখা মেলে বেদনায়। যেমন ভিটামিন সি, ই, কে, সেই সাথে আরো আছে ফলিক অ্যাসিড পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম। সুতরাং দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বাঁচতে আমরা এই ফলটির সাথে বন্ধুত্ব করতেই পারি।

বেদানা খাওয়ার অপকারিতাঃ


বেদানা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বেদানার বিভিন্ন পুষ্টিগুণ আমাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনেক সমস্যা সমাধানের সাহায্য করে। স্বাস্থ্যের এত উপকার করা সত্ত্বেও বেশ কিছু কারণে অনেকেরই বেদানাকে এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ অনেকের জন্যই কিছু কিছু সময় বেদনা মারাত্মক ক্ষতিকারক হতে পারে। যেমন

এলার্জির সমস্যাঃ যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তারা বেদানা খাওয়া থেকে দূরে থাকুন। এলার্জি থাকার পরেও বেদানা খেলে সমস্যা আরো বাড়তে পারে। বেদানা খেলে আমাদের শরীরের রক্ত বাড়ে এবং এই পরিস্থিতিতে যদি তকে এলার্জি থাকে তবে শরীরে লাল গোটা বের হতে পারে।

অ্যাসিডিটির সমস্যাঃ যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাদের বেদানা খাওয়া উচিত হবে না। বেদানার ঠান্ডা প্রভাবে খাবার ঠিকমতো হজম হয় না।

নিম্ন রক্তচাপঃ যারা নিম্ন রক্তচাপে ভোগে থাকেন তাদের বেদানা খাওয়া উচিত নয়। কারণ বেদানায় একটি শীতল ভাব আছে যা আমাদের শরীরের রক্তের চলাচলের গতি কমিয়ে দেয়। নিম্ন রক্তচাপের জন্য যারা ওষুধ গ্রহণ করেন তারা বেদানা খেলে ক্ষতি হতে পারে। কারণ বেদানার উপস্থিত উপাদান গুলি ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করতে পারে ফলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলেঃ যারা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদেরও বেদানা খাওয়া উচিত নয়। বেদনা অত্যাধিক পরিমাণ খেলে হজম ব্যবস্থার সমস্যা হতে পারে। কারণ বেদানার ঠান্ডা প্রভাবে খাবার ঠিকমতো হজম হয় না।

কাশিতে ভুগলেঃ বেদানা ঠান্ডা প্রকৃতির, তাই কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডালিম খাওয়া উচিত নয়। এই ধরনের লোকেরা যদি অধিক পরিমাণ বেদানা খান তবে তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

বেদানা খাওয়ার নিয়মঃ


ফল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। যদি সেই ফল হয় বিভিন্ন ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্যবহার কর তাহলে তো কোন কথাই নেই। আমাদের শরীরের অধিকাংশ রোগ নিরাময় করে ফল। ফল থেকে পাওয়া ভিটামিন গুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে।
তবে যে কোন ফল ই আমাদের নিয়ম মেনে সঠিক সময়ে খাওয়া উচিত। সঠিক সময়ে ফল খেলে ফলের ভিটামিন গুলো আমাদের শরীরে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজে আসবে। প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিতে ভরপুর বেদানা খাওয়ার সঠিক সময় হল সকালের খাবার পর। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেদানা খাওয়া যেতে পারে। তবে সম্পূর্ণ খালি পেটে বেদানা খাওয়া ঠিক হবে না।

লেখকের মন্তব্যঃ 


বেদানা অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল। বিভিন্ন ভিটামিন এন্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর বেদনা। যারা রক্তস্বল্পতায় ভোগেন বা অপুষ্টিতে ভোগেন তারা নিয়মিত বেদানা খেতে পারেন। বেদানা রক্তস্বল্পতা দূর করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তবে বেদনার সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ গ্রহণ করতে চাইলে আপনাকে সঠিক সময়ে বেদানা খেতে হবে।

বিশেষজ্ঞের মতে বেদানা খাওয়ার সঠিক সময় হচ্ছে সকাল। আমরা যদি সঠিক সময়ে নিয়মিত বেদানা খেয়ে থাকে তবে এর উপাদান দ্বারা আমরা উপকৃত হব। কারণ বেদানার পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার অবকাশ নেই।

প্রিয় পাঠক, বেদানার পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে এই পোস্টটি আলোচনা করা হয়েছে যদি আপনাদের এটা ভালো লেগে থাকে উপকৃত হন তবে পোস্টটি অবশ্যই নিজেদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url