কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন
বেদানার কিছু বিস্ময়কর উপকারিতাকিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। অনেকে আবার খোঁজাখুঁজি করেও নির্ভরযোগ্য তথ্য পায়না। কিসমিসের পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী যদি সবাই জানতো তাহলে আমাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কিসমিস থাকতো।
এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আরো আলোচনা করেছি কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সম্পর্কে, খাওয়ার নিয়ম ও সময় সম্পর্কে। সুতরাং পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকাঃ
কিসমিস হল একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুকানো আঙ্গুর। বিশ্বের বিভিন্ন
দেশে কিসমিস উৎপাদিত হয়। কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের
সবারই জানা উচিত। কিসমিস অত্যন্ত উপকারী। কিসমিসের উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে
না। শুধু কিসমিস না কিসমিসে ভেজানো পানীও বেশ পুষ্টিকর।
আরো পড়ুনঃ নিয়মিত কমলা খাওয়ার উপকারিতা
কিসমিস হচ্ছে এক ধরনের অত্যন্ত জনপ্রিয় ড্রাই ফুড যাতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ,
এন্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, পলিফেনলস ও আরো বেশ কয়েকটি ফাইবার। কিসমিস
যেমন শরীরে শক্তি যোগায় তেমনি রক্ত উৎপাদনেও সহায়তা করে। কিসমিসে আছে নানা
ধরনের ভিটামিন এবং মিনারেল। এটা শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টরেল দূর করে।
কিসমিসের পুষ্টিগুণ উপাদানঃ
কিসমিস তথা শুকনো আঙ্গুর অনেক উপকারী আমাদের শরীরের জন্য। আলাদা করে সাধারণত
কিসমিস খাওয়া হয় না বিভিন্ন রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। আলাদাভাবে নিয়মিত
কিসমিস খাওয়া যেতে পারে। পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে আছে
এনার্জি৩০৪ কিলো ক্যালরি, কার্বোহাইড৭৪.৬ গ্রাম, ফ্যাট ০.৩ গ্রাম, ডায়েটরি
ফাইবার ১.১ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮৭ মিলিগ্রাম, আয়রন ৭.৭
মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৭৮ মিলিগ্রাম ও সোডিয়াম ২০.৪ মিলিগ্রাম।
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতাঃ
সুস্থভাবে ওজন বাড়াতেঃ সবাই ওজন কমাতে চাই কিন্তু আবার কেউ কেউ ওজন
বাড়াতে চাই। ওজন বাড়াতে অনেকেই বডি গ্রোথ ট্যাবলেট খেয়ে থাকে যা আমাদের
স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সুস্থভাবে ওজন বাড়াতে চাইলে নিয়মিত কিসমিস
খেতে পারেন। এর ফলে শরীরের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে না।
কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্র্রুক্টোজ, গ্লুকোজ ও পোটেনশিয়াল। অ্যাথলেটদের
কিসমিস খেতে বলা হয় কালো প্রচুর এনার্জি লাগে। সুতরাং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল
এড়িয়ে সুস্থভাবে ওজন বাড়াতে চাইলে কিসমিস খেতে হবে নিয়মিত।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ কিসমিসে ক্যাটেচিন নামক এক ধরনের অ্যান্টি
অক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের ভেতর ভেসে বেড়ানো ফ্রি র্যাডিকেল গুলোকে লড়াই করে
ধ্বংস করে ফেলে। ফ্রি র্যাডিকেল গুলোই শরীরে ক্যান্সার সেল তৈরি করতে
স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহায়তা করে। যদি আমরা আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখি
তবে কিসমিসে থাকা ক্যাটেচিন এর মত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মাত্রা বৃদ্ধি
পায় যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধেঃ কিছু কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে যে কিশমিশ
পোস্ট প্রাণ্ডিয়াল ইনসুলিন রেসপন্স কে নামিয়ে দেয়, যার মানে হলো কিসমিস খেলে
লাঞ্চ অথবা ডিনারের পরে শরীরে যে ইনসুলিনের হঠাৎ বৃদ্ধি বা ঘাটতি দেখা যায় তা
প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ঘ্রেলিন ও লেপটিন নামক দুটি হরমোনের রিলিজেও কিসমিস সাহায্য করে যেগুলো শরীরকে
সিগনাল দেয় যে কখন খিদে পেয়েছে এবং কখন যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
তাই কিসমিস খেলে অত্যাধিক খাওয়া রোধ করা সম্ভব হয়।
মস্তিষ্কের জন্য উপকারীঃ কিসমিসের ভেতরে যে বোরন থাকে তা মস্তিষ্কের
জন্য খুবই উপকারী। বোরন ধ্যান বাড়াতেও সাহায্য করে। যার ফলে কাজে মনোযোগ বাড়ে।
এটি পড়াশোনায় মনোযোগী করে তুলতে সাহায্য করে।
জ্বর সারাতেঃ কিসমিসে রয়েছে ফেনোল ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস, যার
জীবানুনাশক শক্তি হলো অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিঅক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্য
ভাইরাল ইনফেকশনের জন্য জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য কিসমিস একটি আদর্শ
খাবার এবং অনেক উপকারী। কিসমিস চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। কিসমিসে রয়েছে
ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন যা চোখের জন্য যথেষ্ট উপকারী।
অ্যানিমিয়া প্রতিরোধঃ কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন যার
রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াকমাতে সরাসরি সাহায্য করে। তাছাড়াও ভিটামিন বি
কমপ্লেক্সের অন্তর্গত বেশ কিছু ভিটামিন পাওয়া যায় যা নতুন রক্ত তৈরিতে সাহায্য
করে। কিসমিসে যে কপার থাকে তা রেড ব্লাড সেল তৈরিতে সাহায্য করে।
দাঁতের যত্নেঃ কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যার জন্য
এটি দাঁত শক্ত করে এবং এনামেল গড়তেও সাহায্য করে। যা সুস্থ দাঁতের জন্য খুব
দরকার। অলিওনেলিক এসিড বলে একটি ফাইটো কেমিক্যাল আছে যেটি দাঁতের ক্ষয় ক্যাভিটি
ও দাঁতের ভঙ্গুরতা তা থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
হাড়ের স্বাস্থ্য বর্ধনঃ কিসমিসে বোপাওয়া যায় আরো এক ধরনের উপাদান
ক্যালসিয়াম যা হাড় ও দাঁতের জন্য খুবই উপকারী। বোরন নামক এক মাইক্রো
নিউট্রিয়েন্টস কিসমিসে থাকে যা সঠিকভাবে হার গঠনে সাহায্য করে এবং ক্যালসিয়াম
কে তাড়াতাড়ি শুষে নিতে সাহায্য করে। মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস শরীরে খুব অল্প
পরিমাণে দরকার হয় কিন্তু এর গুরুত্ব অপরিসীম শরীরের জন্য।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ আমাদের সুস্থ থাকার জন্য হজম শক্তি ভালো হওয়া
জরুরি। সে ক্ষেত্রে কিসমিস খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার
আগে একগ্লাস পানিতে কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন এবং পরের দিন সেই কিসমিস গুলা খান। টানা
১৫ দিন কিভাবে খেলে উপকার বুঝতে পারবেন।
কিসমিস খাওয়ার নিয়মঃ
পুষ্টিতে ভরপুর কিসমিস আমরা বিভিন্নভাবে খেতে পারি। আমরা কিসমিস শুকনা খেতে পারি
অথবা পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারি। পুষ্টিবিদরা বলছেনদিনে ১০ থেকে ১২ টি কিসমিস
খাওয়া ভালো। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে
পারেন। কিসমিস খাওয়ার সব থেকে ভালো নিয়ম হলো আগের রাতে এক কাপ পানিতে কিসমিস
গুলো ভিজিয়ে দিতে হবে এবং পরের দিন সকালে সেই পানি গুলো ছেঁকে খেতে হবে
আরো পড়ুনঃ নিয়মিত পেয়ারা খেলে যে উপকার পাবেন
সকালে খালি পেটে কিসমিসের পানি খেলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। কিসমিস আমাদের
শরীরের খারাপ কোলেস্ট্রল দূর করতে সাহায্য করে। কিসমিসের ভেতরে থাকে ডায়েটারি
ফাইবার। যা সিরার মধ্যে জমে থাকা কোলেস্টেরল দূর করতে সহায়তা করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানেও কিসমিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিতঃ
কিসমিসের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। আমরা বিভিন্নভাবে কিসমিস খেয়ে থাকি কিন্তু
দিনে কি পরিমান কিসমিস খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে আমরা অনেকে অবগত না। কি পরিমান
কিসমিস খেলে তা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হবে তা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি ?
পুষ্টিবিদদের মতে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া যায়। এর বেশি খেলে তা
ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই
পানি সহ কিসমিস খাওয়াটা সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এবং উপকারী।
কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি হয়ঃ
কিসমিসে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল। কিসমিস না খেয়ে শুধু যদি কিসমিস
ভেজানো পানি দাও খাওয়া হয় তবুও শরীরে ভিটামিন ও মিনারেল প্রবেশ করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে কিসমিস ভিজিয়ে রেখে সেই পানিটুকু খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার
পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ আপেলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানুন
আগের দিন রাতে এক গ্লাস পানিতে কিসমিস ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং পরের দিন সকালে সে
পানি সহ কিসমিস খেতে হবে। ভেজা কিসমিসে রয়েছে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম,
ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবার। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিসমিস ভেজা পানির বেশি
গুরুত্ব রয়েছে।
কিসমিসের অপকারিতাঃ
ত্বকের এলার্জিঃ একেক রকম মানুষের একেক রকমের খাবারে এলার্জি থাকতে
পারে। অনেকের আবার কিসমিসে এলার্জি আছে। তাই কিসমিস খাওয়ার পরে লক্ষ্য রাখতে হবে
যাতে চুলকানি বা ফুসকুড়ির মত কিছু না হয়। সেরকম কিছু লক্ষ্য করা গেলে কিসমিস
খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ওজন বৃদ্ধিঃ কিসমিসে থাকে উচ্চ পরিমাণ ক্যালরি। এ অবস্থায় ওজন কমাতে
চাইলে কিসমিস খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সীমিত
পরিমাণ কিসমিস খাওয়া উচিত।
রক্তের শর্করা বৃদ্ধিঃ কিসমিসে চিনি ও ক্যালোরির পরিমাণ অনেক। তাই
এটি অল্প খেলেও উপকার মিলে কিন্তু বেশি খেলে ক্ষতি হয়। মাত্রাতিরক্ত কিসমিস খেলে
শরীরের রক্তের শর্করা বৃদ্ধি পেতে পারে।
লেখক এর মন্তব্যঃ
কিসমিস নিঃসন্দেহে একটু উপকারী খাবার। কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
রয়েছে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ কিশমিশ খেলে সমস্যা নেই বরং তা ভালো আমাদের
শরীরের জন্য কিন্তু বেশি পরিমাণে কিসমিস খেলে তা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ
হয়ে দাঁড়ায়।
কিশমিশের সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে কিসমিস ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে ভেজা কিসমিস
সাথে পানি দুটোই একসাথে খেতে হবে। কিসমিস যথেষ্ট উপকারী কিন্তু আমাদের তা নিয়ম
মেনে খাওয়া উচিত।
প্রিয় পাঠক, কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা এই পোস্টে
বিস্তারিত আলোচনা করেছি তা যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই পোস্টটি
পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দেবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url