খালি পেটে চিরতা খাওয়ার ১৫টি বিস্ময়কর উপকারিতা
তোকমা দানায় ১১টি সমস্যার সমাধানপ্রাচীনকাল থেকেই চিরতা গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেই চিরতা সম্পর্কে জানেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে চিরতার জুড়ি নেই। চিরতার স্বাদ তেতো হলেও এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। অতিরিক্ত মেদ ঝরানো, জ্বর কমানো এবং তার অন্য ধরে রাখতে এটি খুব কার্যকরী।
এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করেছি খালি পেটে চিরতা খাওয়ার ১৫টি বিস্ময়কর
উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম এবং সময় সম্পর্কে সুতরাং পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকাঃ
চিরতা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ভেষজ গাছ। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে এই গাছ খুবই
কার্যকরী। প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষে চিরতার ব্যবহার হয়ে আসছে। ভারতবর্ষ হল
চিরতার আধি নিবাস। হিমালয়ের পাদুভূমিতে এর উৎপত্তি। চিরতা ইউরোপে প্রবেশ করে
১৮৩৯ সালে। চিরতার আয়ুর্বেদিক নাম হলো কিরাততিক্তা।
আরো পড়ুনঃ ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম
চিরতার স্বাদ প্রচন্ড পরিমাণে তিতা তারপরও এর মধ্যে রয়েছে আমাদের শরীরের বেশ
কিছু উপকারিতা। রোগ নিরাময়ের জন্য চিরতার সমস্ত গাছটি ব্যবহার করা হয় তবে চিরতা
গাছের জড় বেশি উপকারী। জ্বর ও চর্ম রোগ সারাতে চিরতার বিশেষ সুনাম রয়েছে।
এছাড়াও হেপাটাইটিস, ডায়াবেটিস, ম্যালেরিয়া জ্বর এবং এজমা প্রভৃতি কঠিন অসুখ
সারাতেও চিরতার ব্যবহার করা হয়।
চিরতা খাওয়ার ১৫ টি উপকারিতাঃ
জ্বর কমাতে সাহায্য করেঃ আবহাওয়া চেঞ্জ হওয়ার ফলে অনেকেরই জ্বর হয়,
সর্দি ও কাশি বেড়ে যায়। অনেকের আবার শুধুমাত্র রাতের বেলা জ্বর আসে এবং হাত পা
চাপায় কামড়ায়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে চিরতার পানি খাওয়া খুবই উপকারী।
কেউ যদি নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি খেয়ে থাকে তবে জ্বরের এই ভাবটা চলে যাবে।
এলার্জি সারাতে চিরতাঃ যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের জন্য চিরতা
খুবই উপকারী একটি ভেষজ গাছ। এলার্জির সমস্যার জন্য যাদের শরীরে চুলকায়, চুলকানোর
জায়গায় লাল লাল হয়ে ফুলে ওঠে, ত্বক চাকা চাকা হয়ে থাকে তারা অবশ্যই চিরতার
শরণাপন্ন হতে পারেন। আগের দিন রাতে ৪/৫গ্রাম পরিমাণ চিরতা ২৫০ মিলিগ্রাম পানিতে
ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন সকালে ভালোভাবে ছেঁকে নিয়ে খালি পেটে চিরতা পানি
খেতে হবে। এভাবে কিছুদিন নিয়মিত খেলে এলার্জি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
তবে যেসব খাবার খেলে এলার্জি হয় সে খাবার গুলোকে এড়িয়ে চলা উচিত।
তারুণ্য ধরে রাখেঃ তারুণ্য ধরে রাখতে চিরতা বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে চিরতার পানি খেতে পারেন এর ফলে রক্ত পরিষ্কার থাকবে এবং
রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। ত্বক ভেতর থেকে সুস্থ থাকবে। এর ফলে ত্বকে ব্রণ, ফুসকুড়ি ও
রসে সমস্যা দূর হবে। চামড়ার বিভিন্ন রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেঃ আমাদের সুস্থ থাকতে হলে রক্তে
শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জরুরী। আর এই কাজটি চিরতা খুব ভালোভাবে সম্পন্ন
করতে পারে। চিরতা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং চিরতার পানি রক্তের
কোলেস্টেরলের পরিমাণও কম করে।
লিভারকে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করেঃ লিভারকে পরিষ্কার ও সুস্থ রাখতে
চিরতা ভেজানো পানি খুবই উপকারী। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে
চিরতার পানি। শুধুমাত্র নিয়মিত চিরতার পানি খেলে এর উপকার পাওয়া সম্ভব।
শরীরকে টক্সিন মুক্ত রাখতে সহায়তা করেঃ চিরতার পানি প্রচুর পরিমাণে তেতো
কিন্তু এই তেতো পানি আমাদের শরীরের জন্য ভালো। চিরতার পানি শরীর থেকে ক্ষতিকারক
টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখে।
বদহজমের সমস্যা সমাধানেঃ বদ হজমের সমস্যা হলে আপনি নিয়মিত চিরোতার পানি
খেতে পারেন। এটি বদহজম এবং এ্যাসিডিটি থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত রোজ সকালে খালি
পেটে চিরতরে পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
কৃমির সমস্যা সারায়ঃ কৃমির সমস্যায় চিরতার পানি খুবই কার্যকরী। যারা
কৃমির সমস্যায় ভুগেন তারা যদি রোজ রাতে ৩/৫ গ্রাম চিরতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে
সকালে সে পানি খেয়ে নিন তবে কৃমি থেকে মুক্তি পাবেন। চিরতা যেহেতু প্রচুর তেতো
তাই এর সাথে চিনি অথবা মধু মিশে খেতে পারেন। নিয়মিত চিরতার পানি খেলে কৃমির থেকে
মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ তালমাখনা খাওয়ার ১২ টি উপকারিতা
চুলকানির সমস্যা সমাধানে চিরতাঃ চুলকানির সমস্যা সমাধানেও আপনি চিরতা
ব্যবহার করতে পারেন। ২০ গ্রাম মত চিরতার ডাল নিন। এরপর আপনি চাইলে ডালগুলোকে
চূর্ণ করে নিতে পারেন অথবা শীলপাটাই বেটে নিতে পারেন। এরপর লোহার কড়াইয়ে ১০০
গ্রাম মত সরিষার তেল নিয়ে জাল দিতে হবে। সরিষার তেল গরম হয়ে ফেনা মুক্ত হলেই
কেবল চিরতা চূর্ণ দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন চিরতা পুড়ে না যায়। এরপর এই
তেল ঠান্ডা করে চুলকানোর জায়গায় অল্প অল্প করে মালিশ করলে চুলকানি খুব দ্রুত
সরে যাবে।
পচা ঘা সারেঃ পচা ঘা হয়েছে অথচ কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আপনি
চিরতার পানি ব্যবহার করতে পারেন। আগের দিন রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম মত
চিরতা ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন সেই ভেজানো পানি দিয়ে ঘা এর স্থান ধুয়ে দিতে
হবে দিনে ২/৩ বার। এতে ঘা খুব দ্রুত শুকাবে।
চুল পড়া রোধ করেঃ আমাদের প্রত্যেকদিনের ব্যস্ত জীবনে অনেক সময় চুলের
যত্ন করা হয়ে ওঠে না। এর ফলে প্রচুর পরিমাণে চুল ঝরতে থাকে। চুল পড়া রোধ করতে
চাইলে আমরা চিরতার পানি ব্যবহার করতে পারি। আগের রাতে ৫ গ্রাম মত চিরতা পানিতে
ভিজিয়ে রাখতে হবে পরের দিন সেই পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। একদিন পরপর
এভাবে চিরতার পানি দিয়ে মাথা ধুতে হবে। এভাবে নিয়মিত চিরতার পানি দিয়ে চুল
ধরতে পারলে চুল পড়া বন্ধ হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিরতার পানিঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিরতার পানি
খুব উপকারী। চিরতার পানি নিয়মিত খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
চিরতার পানি দেহে অগ্নাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীরা আগে
যাতে ৪/৫ গ্রাম চিরতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খালি পেটে সেই পানি
খেতে পারেন এতে আপনাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে আশা করা যায়।
রক্তশূন্যতা কমায়ঃ চিরতার আমাদের দেহে রক্ত কোষ গঠন করে। তাই যারা
নিয়মিত চিরতা পান করেন তাদের রক্তশূন্যতা কমে যায়। হঠাৎ কোথাও কেটে গেলে সেখানে
চিরতার রস লাগাতে পারেন রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, নাক
দিয়ে রক্ত পড়া এসবও চিরতা বন্ধ করে দিতে পারে। এমনকি মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
হলে তাও কমাতে পারে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে চিরতার বেশ গুরুত্ব রয়েছে।
চিরতার মধ্যে যে অতি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা বার্ধক্যকে বিলম্বিত
করতে পারে। যারা নিয়মিত চিরতার পানি পান করেন তাদের ক্যান্সার এবং হৃদরোগে
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।উচ্চমাত্রার কোলেস্টরেল, উচ্চ রক্তচাপ, এবং অতি ওজন
বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্যও চিরতা খুবই উপকারী।
প্রবল হাঁপানি উপশম করেঃ একজিমার সাথে যাদের হাঁপানি সমস্যা আছে, অল্প
ঠান্ডা লাগলে বা ঋতু পরিবর্তনের ফলে যে ঠান্ডা লাগে সর্দি কাশি হয় এবং হাঁপানের
টান বেড়ে যায় তারা যদি আধা গ্রাম চিরতার গুঁড়ো তিন ঘন্টা পর পর মধুর সাথে চেটে
খাবেন। এভাবে নিয়মিত খেলে ২-৩ দিনের মধ্যেই প্রবল হাঁপানি অনেকটা কমে যাবে।
চিরতা খাবার সময়ঃ
চিরতা খাবার উত্তম সময় হলো সকাল। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চিরতার ডাল অথবা
চিরতার গুড়ো পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা খালি পেটে খাওয়া যায়। বিভিন্ন
বর্ণনায় জানা যায় চিরতা সকালে খালি পেটে খেলে সর্বোত্তম উপকারিতা পাওয়া যায়।
তবে অবশ্যই চিরতা থেকে উপকার পেতে হলে নিয়মিত বেশ কিছুদিন একনাগাড়ে খেতে হবে।
চিরতা খাওয়ার নিয়মঃ
চিরতা খাওয়ার নিয়ম বেশ সহজ। বাজারে চিরতা ডাল পাওয়া যায় অথবা চিরতার গুঁড়ো
পাওয়া যায়। আপনি যদি ছিল তার ডাল নিয়ে আসেন তবে দলগুলোকে ছোট ছোট করে কেটে
আনুমানিক ৪/৫ গ্রাম এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। সকালে ভেজানোর জন্য তার পানি
ভালোভাবে ছেঁকে নিয়ে খালি পেটে খেয়ে নিতে পারবেন।
আরাে পড়ুনঃ কোন সময়ে চিয়াসিড খাওয়া ভালো
আর যদি চিরতার গুঁড়ো কিনে নিয়ে আসেন তবে ঠিক ঐরকমই ৪/৫ গ্রাম পরিমানে নিয়ে
একগ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন সকালে সেই পানি খালি পেটে খাবেন। পেটে খেলে
সর্বোত্তম উপকার পাওয়া যায়। চিরতা প্রচুর পরিমাণে তেতো হয় অনেকেই এমনি এমনি
খেতে পারে না সে ক্ষেত্রে আপনি চাইলে এর সাথে কিছুটা চিনি অথবা মধু মিশিয়ে নিতে
পারেন।
আর যদি আপনার দ্বারা সম্ভব হয় তবে চিরতার ডাল আপনি চিবিয়েও খেতে পারেন। চিরতার
পানি খাওয়ার বিস্ময়কর উপকারিতা গুলো পেতে অবশ্যই নিয়ম করে নিয়মিত চিরতা পানি
খেতে হবে। দুই একদিন খেলেই এটা থেকে উপকার পাওয়া সম্ভব না।
লেখক এর মন্তব্যঃ
চিরতা হলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যগুনে ভরপুর একটি ভেষজ উদ্ভিদ। চিরতা এমন
একটি উদ্ভিদ যার সবকিছুই ব্যবহার হয়। তবে চিরতার ডাল পাতার চেয়ে চিরতার জড় বেশি
উপকারী।ইউনানী চিকিৎসা অনুযায়ী চিরতা হৃৎপিণ্ড ও যকৃতের জন্য খুব ভালো, চোখের
জ্যোতিবর্ধক এবং জ্বরে বিশেষ উপকারী।
এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করেছি খালি পেটে চিরতা খাওয়ার ১৫টি বিস্ময়কর
উপকারিতা সম্পর্কে। এই আলোচনা যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে এই পোস্টটি শেয়ার
করে দিবেন কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্টে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url