সকালে খালি পেটে অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
চিরতা খাওয়ার ১৫টি বিশ্ময়কর উপকারিতাছোলা আমাদের দেশে অতি পরিচিত একটি ডাল জাতীয় শস্য। ছোলার অনেক পুষ্টি মান
রয়েছে। এটা প্রোটিন গ্রুপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এবং সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিন হিসেবে
পরিচিত। ছোলা আমাদের শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে
থাকে। স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে ছোলার বেশ সুনাম রয়েছে।
সকালে খালি পেটে অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে যারা জানতে চান তাদের
জন্য এই পোস্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুতরাং পোস্টটি মনোযোগ সহকারে করুন।
ভূমিকাঃ
প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত ডাল জাতীয় শস্যের মধ্যে একটি আদর্শ খাবার হচ্ছে ছোলা।
ছোলা আমাদের শরীরের প্রোটিনের অভাব পূরণ করে। ছোলা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তার
চেয়ে উপকারী হল অঙ্কুরিত ছোলা। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন অঙ্কুরিত ছোলা হলো
পুষ্টির ভান্ডার। অঙ্কুরিত ছোলার মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি,
প্রোটিন, কার্ব, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, বিটা
ক্যারোটিন, ও ভিটামিন কে’এর মত একাধিক জরুরি উপাদান।
আরো পড়ুনঃ
তোকমা দানায় রয়েছে ১১টি সমস্যার সমাধান
তাই নিয়মিত অঙ্কুরিত ছোলা খেলে অনেক রোগবালা থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়।
অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়ার এমন কিছু চমকপ্রদ উপকারিতা রয়েছে যা এ প্রতিবেদনের
মাধ্যমে জানার পরে আপনি নিজেও এই খাবারটি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে চাইবেন।
অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়ার উপকারিতাঃ
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণঃ ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে অঙ্কুরিত ছোলা একটি
আদর্শ খাবার। আমাদের দেশসহ বিশ্বে প্রতিনিয়ত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা
দিন দিন বাড়ছে। তবে চিন্তার বিষয় হলো এই রোগকে যদি ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে না
পারা যায় তবে শরীরে আরো কিছু ভয়ংকর রোগ বাসা বাধে। যেমন ক্রনিক কিডনি ডিজিজ,
হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি সহ ভয়ঙ্কর সব রোগ। তাই যে কোন
উপায়ে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে।
আর এই কাজে আপনার সঙ্গী হতে পারে অঙ্কুরিত ছোলা। প্রতিদিন সকালে নির্দিষ্ট পরিমাণ
অঙ্কুরিত ছোলা খেলে দেহে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়বে। ফলে প্রত্যক্ষভাবে সুগার
নিয়ন্ত্রণ রাখতে অনেকটাই সুবিধা মিলবে এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
যৌনশক্তি বৃদ্ধি করেঃ যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে
অঙ্কুরিত ছোলা। যারা নিয়মিত অঙ্কুরিত ছোলা খান তাদের যৌন শক্তি বৃদ্ধি হবে। রাতে
ছোলা ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে। শ্বাসনালীতে জমে থাকা
পুরনো কফ বা কাশি ভালো হওয়ার জন্য কাজ করে শুকনা ছোলা ভাজা। ছোলায় রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার বা আঁশ।
প্রোটিন ও আয়রনের ভান্ডারঃ প্রোটিন ও আয়রনের ভান্ডার হলো ছোলা। আপনি যদি
রক্তস্বল্পতায় ভুগেন তবে অবশ্যই আপনার খাবার তালিকায় ছোলা রাখতে হবে। এটি আইরন
সমৃদ্ধ এবং শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। যারা নিরামিষভোজী
তারা প্রোটিন নিয়ে চিন্তিত থাকে। কিন্তু নিয়মিত ছোলা খেলে আপনার শরীরের
প্রোটিনের ঘাটতি দূর হবে। প্রোটিনের ঘাটতি দূর হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও
কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।
হজমে সাহায্য করেঃ অঙ্কুরিত ছোলাই প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা আমাদের
পরিপাকতন্ত্রের উন্নতিতে সাহায্য করে। এটি শরীর থেকে সমস্ত ক্ষতিকারক টক্সিন বের
করে দেয় এবং পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখে। অঙ্কুরিত ছোলায় বিদ্যমান ইনসলিউবল ফাইবার
অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ানোর কাজে সাহায্য করে। ফলে খাবার সহজে
হজম হয়। আর এ কারণেই বদহজম গ্যাসের মত পেটের সমস্যাগুলো এড়িয়ে চলা সম্ভাবনা
হয়।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে অঙ্কুরিত ছোলা। হার্ট আমাদের শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ।
আমাদের সমস্ত শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে। কিন্তু বর্তমানে
আমাদের জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে হার্ট।
তাই হৃদরোগ নিয়ে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত। অস্ট্রেলিয়ান গবেষকরা বলছেন যে
খাবারে ছোলা যোগ করলে খারাপ কোলেস্টরেলের পরিমাণ কমে যায়। ছোলাতে দ্রবনীয় এবং
অদ্রবনীয় উভয় ধরনের আশ রয়েছে যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এর জার্নালে একটি
গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই গবেষণায় দেখা যায় যে সকল অল্প বয়সেই না
বেশি পরিমাণে ফলিক এসিড যুক্ত খাবার গ্রহণ করে তাদের হাইপারটেনশনের প্রবণতা কমে
যায়। যেহেতু বেশ ভালো পরিমান ফলিক এসিড পাওয়া যায় যেহেতু ছোলা খেলে রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ উপায়। এছাড়াও ছোলা বয়সন্ধি পরবর্তীকালে মেয়েদের হার্ট
ভালো রাখতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল এর মাত্রা ঠিক রাখেঃ ছোলাই রয়েছে দ্রবনীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার
যা পিত্তরসকে আবদ্ধ করতে সাহায্য করে কোন শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্র কমায়। এতে
উপস্থিত ডায়েটারি ফাইবার আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্য দুর্দান্ত।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ কোরিয়ান একদল গবেষক তাদের গবেষণায় প্রমাণ
করেছেন যে, বেশি পরিমাণ ফলিক এসিড খাবারের সাথে গ্রহণ করলে নারীরা কোলন ক্যান্সার
এবং রেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে পারেন। এছাড়াও ফলিক
অ্যাসিড রক্তের এলার্জির পরিমাণ কমিয়ে এজমার প্রকপ কমিয়ে দেয়। তাই আপনার খাদ্য
তালিকায় নিয়মিত ছোলা রাখতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারীঃ অঙ্কুরিত ছোলা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
অত্যন্ত উপকারী। ছোলার শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম তাই
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ছোলার শর্করা বেশ ভালো। ১০০ গ্রাম চুলায় আছে প্রায় ১৭
গ্রাম আমিষ বা প্রোটিন, ৬৪ গ্রাম শর্করা বা কার্বোহাইড এবং রয়েছে ৫ গ্রাম ফ্যাট
বা তেল।
অস্থির ভাব দূর করেঃ ছোলাই বিদ্যমান শর্করার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের এর
পরিমাণ কম হওয়ায় তার শরীরে প্রবেশ করার পর অস্থির ভাব হয়।
জ্বালাপোড়া দূর করেঃ সালফার নামক এক খাদ্য উপাদান থাকে ছোলাতে। সালফার
মাথা গরম হয়ে যাওয়া, ও হাত পায়ের তলা জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
ব্যথা দূর করেঃ ছোলাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি। ভিটামিন বি
মেরুদন্ডের ব্যথা, স্নায়ুর দুর্বলতা কমায়। এটি আমিষের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস।
এতে আমিষের পরিমাণ মাছ-মাংসের অংশের পরিমাণের প্রায় সমান। তাই খাদ্য তালিকায়
মাছ-মাংস না থাকলেও আমিষের চাহিদা পূরণ করে ছোলা।
অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়ার অপকারিতাঃ
অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সবচেয়ে বেশি এর অপকারিতা নেই বললেই চলে। তবে
অপকারিতা বলতে, ছোলা অনেকক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর তারপর অঙ্কুরিত হয়। প্রায় ৩০
থেকে ৩৫ ঘন্টা ছোলা পানিতে ভিজিয়ে রাখা লাগে তবে তা অঙ্কুরিত হয়। এই দীর্ঘ সময়
ভেজানোর ফলে এর ভিতরে বেশ কিছু রোগ জীবাণু বংশবিস্তার করার সুযোগ পেয়ে যায়।
রোগ জীবাণুর বংশবিস্তার ঠেকাতে ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা পর পুরাতন পরিবর্তন করে নতুন
পানি দেয়া যেতে পারে। তাই ছোলা ভেজানোর সময় সতর্ক হয়ে যেতে হবে। ভেজানো ছোলা
খাওয়ার আগে পরিষ্কার পানি দিয়ে দুই থেকে তিনবার ধুয়ে নিলে সংক্রমণের এই আশঙ্কা
এড়িয়ে যাওয়া যায়।
কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতাঃ
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ কাঁচা ছোলা আমাদের শারীরিক ওজন কমাতে সাহায্য করে।
কাঁচা ছোলা হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর এবং ফাইবার আছে যার ফলে আপনাকে
বেশিক্ষণ পরিপূর্ণ রাখে। অতিরিক্ত খাবার বা অসাস্থ্যকর স্নাকস খাওয়া থেকে বিরত
রাখে। ফলে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকায় শারীরিক ওজন কমাতে সাহায্য করে।
হার্ট সুস্থ রাখেঃ আপনি যদি নিয়মিত সকালে খালি পেটে ভেজানো ছোলা খান তবে
তা হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ভেজানো ছোলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট যা আপনার রক্তনালীগুলোকে সুস্থ রাখে।
এতে প্রয়োজনীয় পরিমান খনিজ উপাদান রয়েছে যা রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করেঃ ভেজানো ছোলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
ফাইবার যা হজমে সাহায্য করে। ফাইবার পরিপাকতন্ত্রের উন্নতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। এটি শরীর থেকে ক্ষতিকারক সমস্ত টক্সিন বের করে দেয় এবং
পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। তাই নিয়মিত ভেজানো ছোলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য বদহজম এবং
হজমের সমস্যা ও দূর হয়।
চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায়ঃ ছোলা অপরিহার্য কিছু ভিটামিন এবং খনিজের
দুর্দান্ত উৎস। এটি চুলের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভালো। এটি প্রোটিন সমৃদ্ধ যা
চুলের ফলিকল গুলিকে শক্তিশালী রাখে এবং চুল পড়া রোধ করে। নিয়মিত ভেজানো ছোলা
খেলে চুলের অকালপক্কতা রোধ হয়।
ছোলা শক্তির উৎসঃ নিয়মিত ছোলা খেলে তা আমাদের শরীরের শক্তির একটি বড় উৎস
হিসেবে বিবেচিত হবে। সকালে এক মুঠো ভেজানো ছোলা খেলে সারাদিন শক্তিতে ভরপুর থাকবে
শরীর। নিয়মিত ছোলা খেলে শরীর শক্তিশালী হবে এবং শারীরিক দুর্বলতা প্রতিরোধ হবে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ ভেজানো ছোলায় বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং
ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট স্তন ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য
করে। তাই আমাদের শরীরে মারাত্মক এই রোগের ঝুঁকি কমাতে আমাদের ডায়েটে অবশ্যই
ভেজানো ছোলা রাখা উচিত।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারীঃ ভেজানো ছোলা গর্ভবতী মায়েদের জন্য বেশ
উপকারী। যেহেতু এটি আয়রনের একটি ভালো উৎস ফলে এটি গর্ভবতী এবং সদ্য মায়েদের
জন্য অপরিহার্য।
সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ নিয়মিত ভেজানো ছোলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা
ঠিক থাকে। ছোলায় বিদ্যমান জটিল কার্বোহাইড্রেট হজমকে ধীর করে তোলে এবং রক্তে
চিনির শোষণ নিয়ন্ত্রণ করে। ছোলাতে উপস্থিত কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার মাত্রা
কমায় এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমায়।
নিরামিষ ভোজীদের প্রোটিন ও আয়রনের উৎসঃ যারা নিরামিষভোজী তারা প্রোটিনের
উৎস নিয়ে চিন্তিত থাকেন। ভেজানো ছোলা প্রোটিন ও আয়রনের একটি ভালো উৎস। এটি
নিয়মিত খেলে শরীরের প্রোটিন ও আয়রনের ঘাটতি দূর হবে। কেউ যদি রক্তস্বল্পতায়
ভোগেন তবে তিনি যেন অবশ্যই তার ডায়েটে ছোলা যোগ করেন। এটি আইরন সমৃদ্ধ এবং শরীরে
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
ডাল হিসেবে বেশ ভালোঃ ছোলা ডাল হিসেবে বেশ ভালো একটি খাবার। এটি মলি
বেডনাম এবং ম্যাঙ্গানিজের চমৎকার একটি উৎস। ১৬ তে প্রচুর পরিমাণে ফলেট এবং খাদ্য
আঁশ রয়েছে সে সাথে রয়েছে আমিষ, কপার, ফসফরাস, আয়রন এবং ট্রিপট্যোফান।
রক্ত চলাচলঃ এক গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা প্রতিদিন ১/২ তাপ পরিমান ছোলা,
সিম ও মটর খায় তাদের পায়ের আর্টারিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। তাছাড়া ছোলাতে
থাকা আইসো ফ্লাভন ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আর্টারির কার্যক্ষমতা
বাড়িয়ে তোলে।
বার্ধক্য জনিত সমস্যা রোধ করেঃ যারা বার্ধক্য জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা
নিয়মিত প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ভেজানো ছোলা খেতে পারেন। ছোলাতে থাকা
ম্যাঙ্গানিজ বার্ধক্য জড়িত সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে।
কাঁচা ছোলা খাওয়ার অপকারিতাঃ
কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা আমরা অনেকেই জানি তবে এর কিছু অপকারিতাও আছে। যেমন
আমরা অনেকেই কাঁচা ছোলা ভেজে খেতে পছন্দ করি কিন্তু এটা একেবারেই ঠিক নয়।
অনেকেরই ওজন বৃদ্ধি পায়, মোটা হয়ে যায় বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়
তারা অবশ্যই কাঁচা ছোলা খেতে পারেন কিন্তু ভাজা ছোলা খাবেন না। যাদের বমির সমস্যা
রয়েছে তারা কাঁচা ছোলা খাওয়া এড়িয়ে চলুন। আমরা অনেকেই তেল মশলা দিয়ে ছোলা
খেতে পছন্দ করি।
কিন্তু যাদের ওজন বেশি তারা তেল মশলা দিয়ে ছোলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ
অতিরিক্ত তেল মশলা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। যাদের হজম শক্তি কম
থাকে তারা সহজে কাঁচা ছোলা হজম করতে পারে না। এছাড়াও যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে
যাদের রক্তের ডায়ালাইসিস চলছে এবং যাদের শরীরে কিটেনিন ও ইউরিক এসিডের পরিমাণ
বেশি রয়েছে তারা যে কোনো রকমের ছোলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
অঙ্কুরিত ছোলায় বিদ্যমান ভিটামিনসমুহঃ
ছোলা অত্যন্ত পুষ্টিকর। এটি আমিষের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। তাই খাদ্য তালিকায় যদি
ছোলা থাকে তাহলে মাছ মাংসের পরিমাণ কম থাকলেও চলে। আমাদের দেশে মাছ মাংসের বিকল্প
হিসেবে আমষের বিকল্প হিসেবে ছোলাকে ভাবা যেতে পারে। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলাই রয়েছে
১৭ গ্রাম আমিষ বা প্রোটিন, ৬৪ গ্রাম শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট
বা তেল।ছোলাতে থাকা কার্বোহাইড্রেট এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম যার ফলে খাওয়ার পর
খুব খুব সহজে হজম হয়ে গ্লুকোজ হয়ে রক্তে মিশে যায় না বেশ সময় নাই।
আরো পড়ুনঃ কোন সময়ে চিয়াসিড খাওয়া ভাল জানতে পড়ুন
তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ছোলার শর্করা বেশ ভালো। ছোলার ফ্যাট বেশির ভাগই পলি
আনসাচুয়েটেড ফ্যাট যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ফ্যাট
ছাড়াও ছোলায় রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণ। প্রতি ১০০ গ্রাম চুলায়
ক্যালসিয়াম আছে ২০০ মিলিগ্রাম, লৌহ আছে ১০ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন এ ১৯০
মাইক্রগ্রাম। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন বি-১, বি-২, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম। এইসব
ভিটামিনই আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ছোলাই রয়েছে খাদ্য আঁশ যা কোষ্ঠকাঠিন্যে বেশ উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হওয়ার
ফলে মলত্যাগ করা সহজ হয় এবং নিয়মিত মলত্যাগ হওয়ার ফলে ক্ষতিকর জীবাণু
খাদ্যনালীতে থাকতে পারে না। ফলে খাদ্যনালির ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
খাদ্যের আঁশ রক্তের চর্বি কমাতেও সহায়ক। ছোলা দেরিতে হজম হয় এরকম একটি খাবার
যার ফলে শরীরে দীর্ঘক্ষণ শক্তির যোগান থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলা থেকে প্রায়
৩৬০ ক্যালোরিরও বেশি শক্তি পাওয়া যায়।
ছোলা খাওয়ার নিয়মঃ
ছোলা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। তবে ছোলা বেশি প্রচলিত ডাল হিসেবে খাওয়া। এছাড়াও
তরকারিতে ছোলা, সেদ্ধ ছোলা, ছোলা ভাজি, ছোলার ব্যাসন, বিভিন্ন মসলা দিয়ে মাখিয়ে
ছোলা ভুনা ইত্যাদি নানা উপায়ে ছোলা খাওয়া যায়। গ্রামাঞ্চলে শুকনো ছোলাকে গুঁড়ো
করে ছোলার ছাতু খাওয়া হয়। তবে যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা ভেজানো ছোলা এবং
অঙ্কুরিত ছোলা খেতে বেশি পছন্দ করেন।
নির্দিষ্ট পরিমাণ ছোলা রাতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে সেটি খেয়ে নিতে পারেন
আর যদি অঙ্কুরিত ছোলা খেতে চান তবে ছোলা অঙ্কুরিত হতে অঙ্কুরিত হতে ৩০ থেকে ৩৫
ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এরপর ভালোভাবে পানিতে দুই তিনবার ধুয়ে অঙ্কুরিত
ছোলা খেতে পারেন।
যারা ভাবছেন সকালের নাস্তা টা ছোলা দিয়ে সেরে নিবেন তবে তারা
আমারে স্পেশাল রেসিপিটি টেস্ট করতে পারেন। একটা বাটিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভেজানো বা অঙ্কুরিত ছোলা সাথে স্বাদমতো লবণ( যদি
প্রেসারের সমস্যা না থাকে) ১টা শষা,১টা গাজর, ১টা টমেটো কুচি করে কেটে নিয়ে
একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। আপনার পেটো ভরবে এবং পুষ্টির চাহিদাও পুরন হবে।
লেখক এর মন্তব্যঃ
প্রকৃতি আমাদের হাতের কাছেই বিভিন্ন উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর খাবার সাজিয়ে
রেখেছে শুধু প্রয়োজন সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তা নিজেদের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত
করা। ছোলা এমন একটি পুষ্টি সম্পন্ন খাবার তা যদি আমাদের খাদ্য তালিকায়
অন্তর্ভুক্ত করি তবে আমাদের শরীর পুষ্টিতে সমৃদ্ধ হবে এবং শরীরে বিভিন্ন রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং আমরা আমাদের শারীরিক সুস্থতার কথা বিবেচনা
করে প্রতিনিয়ত খাদ্য তালিকায় ছোলা রাখতেই পারি।
প্রিয় পাঠক, আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে আলোচনা করেছি অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়ার
উপকারিতা এর পুষ্টিগুণ এবং ছোলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে যদি তা আপনাদের ভালো লেগে
থাকে তবে পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url