কোন পদ্ধতিতে কোয়েল পাখি পালন বেশি লাভজনক জানতে পড়ুন
কিভাকে ক্যাপসিকাম চাষ করলে সর্বাধিক লাভবান হবেনকোয়েল পাখি পালন আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়। যদিও বিদেশি পাখি তারপরও এই পাখিকে
সহজে পোষ মানানো যায়। এই পাখি পালন অনেকটা সহজ এবং পরিশ্রম তুলনামূলক কম। যারা
কোয়েল পাখি পালনের মাধ্যমে তাদের বেকারত্ব ঘোচাতে চান তাদের জন্য এই পোস্টটি
খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
এ পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করেছি কোন পদ্ধতিতে কোয়েল পাখি পালন করলে বেশি
লাভজনক হবে তাই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকাঃ
আমাদের দেশে অতি পরিচিত একটি পাখি হচ্ছে কোয়েল। যদিও এ পাখির আদি নিবাস জাপানে।
অনেকে শখের বসে বাসায় কোয়েল পাখি পালন করেন এবং এটি পালন করা অনেক সহজ এবং সহজে
পোস মেনে যায়। অনেক বেকার যুবক তাদের বেকারত্ব দূর করছেন কোয়েল পাখি পালনের
মাধ্যমে।
কোয়েল পাখি পালনের মাধ্যমে অনেকে উদ্যোক্তা হয়েছেন তবে খামার করতে গেলে বেশ
কিছু বিষয় অবশ্যই জানা প্রয়োজন। যেমন কোন জাতের কোয়েল পাখি পালন করতে হবে,
কোয়েল পাখি পালনের পদ্ধতি সম্মন্ধে জানতে হবে, কোয়েলের আবাসন, সুস্থতা ও
ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোয়েল প্রতি বর্গফুটে ৮টি পাখি
পালন করা যায়।
কোয়েল পাখির জাতঃ
বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১৮ টি জাতের কোয়েল পাখি বাজারে পাওয়া যায়। যে কোন
জাতের কোয়েল পাখি ব্যবসার জন্য লাভজনক। কোয়েল পাখিকে আমরা জাপানের পাখি বলেই
জানি। কারণ জাপানেই প্রথম কোয়েল পাখিকে গৃহপালিত করা হয়েছে। লেয়ার জাতের
কোয়েল শুধু ডিম উৎপাদন করে এবংব্রয়লার জাতের কোয়েল পাখি মাংস উৎপাদনের জন্য
ব্যবহার করা হয়।
লেয়ার জাতের কোয়েলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাত হলো
- ফারাও
- টুক্সিডো
- ইংলিশ হোয়াই
- ম্যানচিরিয়াল গোল্ডেন
- ব্রিটিশ রেঞ্জ ইত্যাদি
ব্রয়লার জাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাত হলো
- আমেরিকান বব হোয়াইট কোয়েল
- ইন্ডিয়ান হোয়াইট ব্রেস্টেড কোয়েল ইত্যাদি।
কোয়েল পালনের পদ্ধতিঃ
কোয়েল পাখি পালন অবশ্যই লাভজনক হতে পারে যদি তা সঠিক পদ্ধতি মেনে পালন করা হয়।
সাধারনত দুইটি পদ্ধতিতে কোয়েল পাখি পালন করা হয়।
লিটার পদ্ধতিঃ একটি হল লিটার পদ্ধতি অর্থাৎ একটি আবদ্ধ ঘরের মেঝেতে তুষ্ট
ছিটিয়ে লিটার তৈরি করে প্রতি বর্গফুটে ৮টি হারে পাখি ছেড়ে পালন করতে হয়। লিটার
পদ্ধতিতে কোয়েল পাখি পালন করা বেশ অসুবিধা জনক। পাখি বিভিন্ন রোগবালাই দ্বারা
আক্রান্ত হয়। লিটার পদ্ধতিতে ভয়ঙ্কর রোগ হলো আসিরিটিভ এনটিরিটিস বা কোয়েল ডিজিজ।
অনেক সময় বোঝা যায় না যে রোগটি হয়েছে।
কিন্তু পাখি এ রোগে আক্রান্ত হলে ৩ দিনের মধ্যে সব কথা মারা যেতে পারে। দ্বিতীয়
যে রোগে পাখি আক্রান্ত হয় সেটি হল কৃমি। এ রোগে আক্রান্ত হলে পাখির মারা যায় না
তবে ডিম দেওয়া কমে যায়। পদ্ধতিতে আরো একটু অসুবিধা হলো পাখির আমাশয়। এ
পদ্ধতিতে পাখি যেহেতু লিটারের উপর থাকে এবং নিজের বিষ্ঠার উপরে চলাচল করে তাই
আমাশয় হতে পারে পাখির। ওষুধ খাওয়ালে আমাশয় সব ভালো হয়ে যাবে কিন্তু ততক্ষণে
ডিমের উৎপাদন কমে যাবে।
আরো পড়ুনঃ ত্বকের যত্নে গাজর কতটা উপকারী জানতে পড়ুন
এ পদ্ধতিতে পাখি তার বিস্তার উপরে চলাচল করে অনেক সময় এই বিষ্ঠা থেকে
অ্যামোনিয়া গ্যাস বের হয় এর ফলে পাখির চোখ ফুলে যায়। তবে ঠিকমতো বাতাস চলাচল
করলে এটা ঠিক হয়ে যায় কিন্তু ততক্ষণে ডিমের উৎপাদন কমে যায়। যা ব্যবসায়িক
ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। লিটারে ফাঙ্গাস হতে পারে এবং কোন পাখি যদি এ ফাঙ্গাস
খেয়ে ফেলে তাহলে পাখি বাঁচবে না।
এ পদ্ধতিতে কোয়েল পাখি ঘরের মধ্যে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় উড়ে এবং
কোনোভাবে ডিমের উপর পড়লে ডিম ভেঙে যায় যার ফলে ব্যবসায়ীকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।
এ পদ্ধতিতে খাবারও বেশি পরিমাণে নষ্ট হয়।
খাঁচা পদ্ধতিঃ খাঁচা পদ্ধতিতে কোয়েল পাখি পালন করা বেশ লাভজনক। লিটার
পদ্ধতির চেয়ে খাঁচা পদ্ধতিতে পাখির রোগবালা অনেক কম হয়, খাবার কম নষ্ট হয় এবং
খাঁচায় পালনকৃত পাখির ডিমের উৎপাদনের সংখ্যা বেশি। সুতরাং বলা যেতেই পারে কোয়েল
পাখি পালনের সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো খাঁচা পদ্ধতি।
কোন পদ্ধতি বেশি লাভজনকঃ
খাঁচা পদ্ধতিতে কোয়েল পাখি পালন সবচেয়ে বেশি লাভজনক। এ পদ্ধতিতে পাখির ঘর বা
খাঁচা উচুতে স্থাপন করা থাকে। খাচার ছাউনি বা চারপাশে নেট দেয়া থাকে যাতে খাঁচার
ভেতরে বাতাস যাতায়াত করতে পারে। খাঁচা পদ্ধতিতে পাখির রোগবালায় তুলনামূলক অনেক
কম। এ পদ্ধতিতে খাবার নষ্ট কম হয়।
পাখির উড়াউড়ি বা চাপাচাপির মধ্যে ডিম ভাঙ্গার কোন সুযোগ থাকে না। এতদিন খাবার এবং
পানি পরিবর্তন করা যায় খুব সহজেই। অনেকগুলো পাখি অল্প শ্রমিক দ্বারা সহজেই
পরিচর্যা করা যায়। কোয়েল পাখি পালনকে আরো লাভজনক করতে হলে পাখির খাবার বিষয়ে
বেশ যত্নবান হতে হবে। পাখিকে নিম্নমানের খাবার দেয়া যাবে না। নিম্নমানের খাবার
হলে পাখির আমাশয় বা পেটে সমস্যা দেখা দিবে।
এর ফলে পাখি মারা না গেলেও ডিমের উৎপাদন কমে যাবে। এর ফলে উদ্যোক্তা ব্যবসায়িক
ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। পাখির সুস্থতার প্রতি পড়া নজর রাখতে হবে যদি পাখির সুস্থ
থাকে তবে পর্যাপ্ত ডিম দিবে আর অসুস্থ পাখি হলে পর্যাপ্ত ডিম দিবে না। লিটার
পদ্ধতিতে পাখি অসুস্থ হওয়া সম্ভবনা বেশি থাকে তাই খাঁচা পদ্ধতিতেই কোয়েল পালন
করা সবচেয়ে বেশি লাভজনক।
একই পরিমান জায়গা হলেও লিটার পদ্ধতির চেয়ে খাচা পদ্ধতিতে একই জায়গায় আরো বেশি
পাখি পালন করা যায়।পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা সহজ বিধায় পাখির রোগবালা কম হয়।
পাখির পালক সহজে পড়ে না। ছোট ইদুর খাঁচার ভিতর ঢুকে পাখিকে আক্রমণ করতে পারে না।
ঘন ঘন লিটার পুরস্কার করার ঝামেলা থাকেনা। লিটার না থাকাই কোন অ্যামোনিয়া গ্যাস
তৈরি হয় না। পাখি খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়। দৈহিকভাবে পাখির বৃদ্ধির চাকচিক্য
লক্ষ্য করা যায়।
কোয়েল পাখি পালনের আনুমানিক লাভের হিসাবঃ
কোয়েল পাখি ফ্লোরে এবং খাঁচা দুইভাবে পালন করা যায়। ফ্লোরে পালন করলে মূলধন
কিছুটা কম লাগে আর খাচায় পালন করলে মূলধন কিছুটা বেশি লাগে। ফ্লোরে যদি কেউ ১০০০
কোয়েল পাখি পালন করতে চাই তবে তাকে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে
শুরু করতে হবে। সকল পরিচর্যা ঠিকভাবে করার পর লেয়ার কোয়েল পাখি থেকে প্রতি মাসে
আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হতে পারে।
শীতকালে যেহেতু ডিমের দাম বেশি থাকে সেহেতু লাভের পরিমাণ একটু বেশি এবং
গ্রীষ্মকালে ডিমের দাম একটু কম থাকায় লাভ একটু কম হতে পারে। খাজা পদ্ধতিতে
কোয়েল পাখি পালন শুরু করতে বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয়।
কোয়েল পাখি কেন পালন করবঃ
কোয়েল পাখি একটি লাভজনক পোল্ট্রি। ১১ টি পোল্ট্রি প্রজাতির মধ্যে কোয়েল হচ্ছে
সবচাইতে ছোট আকারের পোষা পাখি। হাঁস মুরগির মত অতটা পরিচিত না হলেও বর্তমানে এটি
বেশ জনপ্রিয়। কেননা অল্প জায়গায়, কম মূল্যে এবং কম খাদ্যে কোয়েল পালন করা
যায়।কোয়েল পাখি আমরা কেন পালন করব সে বিষয়ে আরো কিছু আলোচনা করা হলো।
- কম খরচে অল্প পুজিতে যে কেউ সহজেই ছোটখাটো খামার দিয়ে কোয়েল পাখি পালনের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
- কোয়েলের আকৃতি ছোট হওয়ায় আবদ্ধ অবস্থায় কোন জায়গাতেও বেশি সংখ্যক পালন করা যায়।
- ৫সপ্তাহের মধ্যে( জাপানি কোয়েল) এবং৮ সপ্তাহের মধ্যে ( বব হোয়াইট কোয়েল) পূর্ণতা লাভ করে।
- মাংসের জন্য উৎপাদিত ব্রয়লার কোয়েল গুলো পূর্ণতা পেলেই বাজারজাত করা যায়।
- ৬-৭ সপ্তাহ ( জাপানি কোয়েল) এবং ৮-১০ সপ্তাহের মধ্যে( বব হোয়াইট কোয়েল) ডিম পাড়া শুরু করে।
- জাপানি কোয়েল ও বব হোয়াইট কোয়েল পাখি বছরে যথাক্রমে ২০৫-৩০০ ও ১৫০-২০০ টি ডিম দিয়ে থাকে।
- কোয়েল পাখির ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে ১৭-১৮ দিন।
- কোয়েল পাখির ডিম এবং মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং গুণগত মানে উৎকৃষ্ট।
- মুরগীর তুলনায় কোয়েলের দেহের মাংসের ওজন আনুপাতিক হারে বেশি হয়।
- কোয়েলের বেঁচে থাকার হার ও মুরগির চেয়ে বেশি।
- কোয়েল পাখির রোগ বালাই তুলনামূলক কম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য পোল্ট্রিত চেয়ে বেশি।
- কোয়েল পালনে খাবার খরচ অনেক কম হয়।
- কোয়েলের দৈহিক ওজনের তুলনায় ডিমের শতকরা ওজন বেশি।
- কম পুজিতে সারা বছর কোয়েল পাখি পালন করা যায়।
- কোয়েল পাখির ডিমে কোলেস্টেরল কম এবং প্রোটিনের ভাগ বেশি। ফলে ডিমের চাহিদাও বেশি।
- কোয়েল পাখি পালনের মাধ্যমে বেকার সমস্যা দূর করা যায়।
- কম জায়গায় পারিবারিকভাবে পালন করেও পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা যায়।
কোয়েল পাখির বাজার দরঃ
কোয়েল পাখির বাজার বর্তমানে অনেক সম্প্রসারিত। ইউনিয়ন ভিত্তিক বাজারগুলোতেও এখন
কোয়েল পাখির ডিম ও কোয়েল পাখি পাওয়া যায়। দিন দিন তা আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে।
কোয়েল পাখির ডিম ও মাংস সুস্বাদু হওয়ায় মানুষের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। মাঝারি
খুচরা তরে একটি মুরগি কিনতে কমপক্ষে ৫০০-৬০০ টাকা লাগে কিন্তু একটি কোয়েল পাখির
দাম খুচরা সর্বোচ্চ ৪০-৫০ টাকা।
তাই অল্প খরচে কেনা সম্ভব হয়। বাজারে একটি মুরগির ডিমের তুলনায় একটি কোয়েল
পাখির ডিমের দাম অনেক কম। বাজারে খুচরা একটি কোয়েল পাখির ডিমের দাম ৩-৪ টাকা।
বাজার সম্প্রসারণ এর ফলে নিজ বাসায় অল্প পরিমাণে কোয়েল পাখি পালন করলেও তা সহজে
বিক্রি করা যায় এবং পরিবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়।
লেখকের মন্তব্যঃ
কোয়েল পাখি জাপানি পাখি হলেও আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে বেশ খাপ খাইয়ে
নিয়েছে। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত কোয়েল পাখির খামার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারে
কোয়েল পাখির মাংস ও ডিমের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশে যারা বেকার আছেন
তারা যদি স্বল্প পরিসরে অল্প পুজিতে কোয়েল পাখির খামার শুরু করেন তবে তারা তাদের
বেকারত্ব ঘোচাতে পারবেন।
এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করেছি কোন পদ্ধতিতে কোয়েল পাখি পালন বেশি লাভজনক
এবং কেন কোয়েল পাখি পালন করব। যদি আমাদের এই পোস্ট ভালো লেগে থাকে তবে পরিচিতদের
মাঝে শেয়ার করে দিবেন যাতে তারাও এই তথ্য পেয়ে উপকৃত হতে পারে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url